মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের অধীন গ্রাহকদের নামে আগস্ট মাসে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূতুড়ে বিল এসেছে। এতে গ্রাহকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। নিয়মিত আসা বিলের তুলনায় দেড় থেকে দ্বিগুণ বিল আসায় অনেকেই বিদ্যুৎ অফিসের দ্বারস্থ হচ্ছেন। কেউ কেউ এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছেন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, গরম বেশি থাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে, তাই বিলও বেশি এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের অধীন প্রায় ৮০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন, যার মধ্যে ২২টি চা-বাগানও রয়েছে। এসব গ্রাহকের অনেকেই আগস্ট মাসে দেড় থেকে দ্বিগুণ বিল পেয়েছেন। যেখানে সাধারণত ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিল আসত, সেখানে এসেছে ১,২০০ থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত। এতে উপজেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম ভোগান্তি ও আর্থিক সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, এই ভূতুড়ে বিল যেন ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে।
সিহাব উদ্দিন নামে এক গ্রাহক বলেন, “আমার প্রতিবেশীর মিটারে ১,৩২০ ইউনিট দেখায়, অথচ বিল দেওয়া হয়েছে ১,৪০০ ইউনিটের। এভাবে অতিরিক্ত ইউনিট দেখিয়ে দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বিল আদায় করা হচ্ছে।”
ভানুগাছ বাজারের ব্যবসায়ী রাজন মিয়া বলেন, “দোকানে সাধারণত মাসে ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা বিল আসে। কিন্তু আগস্ট মাসে এসেছে ২,০০০ টাকা। বাসাতেও একইভাবে অতিরিক্ত বিল এসেছে।”
চা-বাগান এলাকার বাসিন্দা চঞ্চল গোয়ালা জানান, “গত মাসে ২০০ টাকা বিল এসেছিল, এ মাসে এসেছে ১,৪০০ টাকা। কেউ কেউ তো কয়েক হাজার টাকার বিলও পেয়েছেন।”
একই এলাকার বিশাল নামের আরেকজন গ্রাহক বলেন, “বিল কম আসবে ভেবে বাসায় দুটি মিটার লাগিয়েছি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, আগের চেয়েও বেশি বিল আসছে।”
রাজ্জাক নামে এক গ্রাহক বলেন, “অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, আগামী মাস থেকে ঠিক হয়ে যাবে।”
কমলগঞ্জ উপজেলার অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহকই একই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
আব্দুল আহাদ রুলু, জাহেদ আহমদ, পারভেজ মিয়া ও শাহাবুদ্দিনসহ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, “এ ক্রান্তিকালে আমাদের অনেকেই ভূতুড়ে বিল দিচ্ছি। অনেক সময় মিটারে রিডিং ঠিক থাকলেও বিল এসেছে দ্বিগুণ। এটি সত্যিই ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এর প্রতিকার প্রয়োজন।”
ন্যাশনাল টি কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবস্থাপক বলেন, “আমার বাগানের শ্রমিকদের বিদ্যুৎ বিল সংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে আমি নিজে ফোনে ও লিখিতভাবে অভিযোগ করেছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাইনি। অফিসের কর্মকর্তারা বিষয়টি আমলে নিচ্ছেন না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন কুমার ঘোষ বলেন, “প্রচণ্ড গরমে দিনরাত ফ্যান চলায় অনেকের বিল বেড়ে যেতে পারে। তবে অফিসে বসে রিডিং নেওয়ার অভিযোগও পেয়েছি। একজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এসএস/আরএন