বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রহমতপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ উল্লাহ’র দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদ এবং তাঁর অপসারণ দাবিতে এক সাংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের উদ্যোগে শনিবার দুপুর ১২টায় চিতলমারী উপজেলা প্রেসক্লাবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী অভিভাবক মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন।
তিনি বলেন, “বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শুরুর দিকে প্রভাব খাটিয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শাহ মোহাম্মদ উল্লাহ রহমতপুর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ দখল করেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তিনি সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা শুরু করেন। তিনি মাদ্রাসার নামে থাকা ঢাকার একটি ফ্ল্যাট, স্থানীয় প্রায় ৫ একর জমি, মাছের ঘের এবং কোদালিয়ার বিলে ৩৫ বিঘা জমি দখল করে ভোগ করছেন।
তিনি প্রতিষ্ঠানটির কয়েক লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়েছেন। যদিও প্রতিষ্ঠানটিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে, তবুও নারী শিক্ষাবিদ্বেষী এই অধ্যক্ষ নতুন চারতলা ভবন থাকা সত্ত্বেও মেয়েদের একটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পাঠদান করতে বাধ্য করছেন, যেখানে উপযুক্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থাও নেই। মেয়েরা যাতে চারতলা ভবনের ওয়াশরুম ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য সেগুলো তালাবদ্ধ রাখা হয়।
তিনি নিয়মিত মাদ্রাসায় আসেন না, হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন না। কর্মচারীদের তিনি পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন। প্রতিবছর দুটি ওয়াজ মাহফিল ও মৌসুমি ফসল থেকে সংগৃহীত অর্থসহ মাদ্রাসা ও এতিমখানার কোনো আয়-ব্যয়ের হিসাব তিনি দেন না।
এছাড়াও, বছরের পর বছর তিনি পরিচালনা পর্ষদের ‘পকেট কমিটি’ গঠন করে সব অনিয়ম আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। সর্বশেষ চলতি বছরের কমিটি গঠনেও তিনি দুর্নীতি করেছেন।
তাঁর এসব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আমরা গত ১০ আগস্ট মাদ্রাসা চত্বরে এক মানববন্ধন করেছি। এ ছাড়া, জেলার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগও জমা দিয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ উল্লাহ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ আড়াল করতে সংবাদপত্রে একটি প্রতিবাদ দিয়েছেন। আমরা এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁর অপসারণের দাবি জানাচ্ছি এবং মিথ্যা প্রতিবাদের তীব্র নিন্দা জানাই।”
সাংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ মোঃ আবু জাফর, হুমায়ুন কবির, প্রভাষক আব্দুর রহমান, মোঃ সুলাইমান, সহকারী শিক্ষক আবুল হাসান, রুহুল আমিন ফকির, মাসুদ রানা, মোঃ আলমগীর হোসেন, জুনিয়র শিক্ষক মোঃ সজীব হোসেন, দপ্তরি মোঃ সোহানুর রহমান, অভিভাবক মোঃ ফজর আলী ও মোঃ সাইফুল শেখসহ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, “আমার বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি মাদ্রাসার সভাপতি না হওয়ায় প্রতিশোধ নিতে এবং আমার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।”
পিএম/আরএন