সমুদ্রে ধারাবাহিক নিম্নচাপ এবং অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে সাগর নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে পটুয়াখালী শহর সংলগ্ন লোহলিয়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন এ সকল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ভেসে গেছে ঘেরের মাছ, সবজি ক্ষেত, পানের বরজ, আমনের বীজতলাসহ ফসিল জমি। পানির আগ্রাসন থেকে বাঁচতে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে দেখা যায়, সদর উপজেলার পৌর শহর সংলগ্ন লোহালিয়া ইউনিয়নের বোর্ড অফিস সংলগ্ন এলাকায় নতুন করে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইদ্রাকপুর, কাকড়াবুনিয়া, দক্ষিণ লোহালিয়া, নাজিরপুরসহ অন্তত ১০টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এ সকল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
ইদ্রাকপুর এলাকার সবজি চাষী শাহ আলম হাওলাদার (৫৫) জানান, লোহালিয়া ইউনিয়নটি কৃষিসমৃদ্ধ। নদী পার হলেই পৌর শহর। শহর সংলগ্ন হওয়ায় এখানকার কৃষকরা তার মতো অনেকেই সবজি চাষ করে থাকেন। পৌর শহরের পুরান বাজার এবং নিউ মার্কেটে তাজা যত সবজি বেচাকিনি হয় তার শতকরা ৮০ ভাগের যোগান দেন এই লোহালিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কৃষিসমৃদ্ধ এই এলাকাটিতে বার বার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই জোড়াতালি দিয়ে বাঁধ মেরামত করে। দেখা যায়- বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার বাঁধ ভেঙ্গে যায়। টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানাই।
একই এলাকার প্রান্তিক কৃষক আব্বাস উদ্দীন (৫০), আয়নালী হাওলাদার (৬৫), আতাহার গাজী (৪৫) সহ একাধিক কৃষক জানান, চলতি আমন মৌসুমের জন্য তারা বীজতলা তৈরী করেছিলেন। দফায় দফায় সাগরে লঘুচাপ ও নিন্মচাপের কারণে টানা বর্ষায় তাদের প্রথম বোনা বীজতলা পানির নীচে চলে যায়। পরে আবার তারা বীজতলায় বীজ বপণ করেন। কিন্তু গত অমাবস্যার জোয়ারের প্রভাবে পানি তোড়ে বেড়িবাঁধের বিশাল অংশ ভেঙ্গে যাওয়ায় তাদের পুরো বীজতলা এখন গলা সমান পানির নীচে রয়েছে।
তারা জানান, শুধু বীজতলা নয় নদী তীরবর্তী প্রায় দেড় হাজার একর জমিতে আমন চাষ করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গা বেড়িবাঁধ দিয়ে যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে নদী থেকে প্রায় চার কিলোমিটার পূর্বের দিকে মাঠেও কোমর সমান পানি থাকছে। ফলে সেসব জমিতে আমন ধান রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কাকড়াবুনিয়া এলাকার পান চাষী সুকুমার শীল (৪৩) জানান, তাদেরসহ আরও কয়েকজনের পানের বরজ কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রতি জোয়ারে পানি উঠছে। তার মতো অনেকের পানের বরজ থেকে আর একটি টাকাও আয় করা সম্ভব হবে না। স্থানীদের ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
এ অবস্থায় জরুরী ভিত্তিতে মজবুত ভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। জরুরী ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ মেরামত করা না হলে কয়েক গ্রামের মানুষের অন্নের জোগান অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাকিব জানান, পটুয়াখালীতে মোট এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এসব বেড়িবাঁধের মধ্যে পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ আংশিক এবং ছয় কিলোমিটার বাঁধ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। বর্ষা ও সাইক্লোন মৌসুমে আকষ্মিক ভাবে কিছু এলাকায় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী মেরামতের ব্যবস্থা করে। এবার টানা বর্ষণ ও অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে কিছু কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে গেছে, কোথায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে এগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এখন পানির চাপ বেশী তাই পানির চাপ একটু কমলে মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হবে
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব না। হয়তো আগামী শুকনা মৌসুমে কাজ সমাপ্ত হতে পারে। তাছাড়া পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকলে অনেক সময় কাজ বিলম্বিত হয়।