বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে পুঁজিবাজারে বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে প্রতারণার অভিযোগে ১০০ কোটি টাকা এবং তাঁর ছেলে সায়ান এফ রহমানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। একই সঙ্গে তাদের দুজনকেই পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতকেও পুঁজিবাজারে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৯৬৫তম কমিশন সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসি বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ২০২৩’ নামের একটি বন্ড ৪ জুন ২০২৩ সালে ১৫০০ কোটি টাকার অভিহিত মূল্য এবং ১০০০ কোটি টাকার ইস্যুমূল্যে অনুমোদন দেয় তৎকালীন বিএসইসি। শ্রীপুর টাউনশিপ নামে একটি কোম্পানি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই তারা বন্ড ইস্যুর জন্য আবেদন করে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৩৫০ কোটি টাকা, অথচ মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকা ভূমি উন্নয়নের নামে উত্তোলন করা হয়—যা কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।
আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি; ব্যাংকটি কেবল জামিনদার ছিল। কিন্তু ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামের বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়। ওই সময় সালমান এফ রহমান ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, ‘বেক্সিমকো সিকিউরড কনভার্টিবল অর রিডিমেবল অ্যাসেট-ব্যাকড গ্রিন সুকুক’ নামে ৩০০০ কোটি টাকার একটি পাঁচ বছর মেয়াদি বন্ড ২৩ জুন ২০২১ সালে অনুমোদন পায়। এ বন্ডের ক্ষেত্রেও তদন্ত কমিটি ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছে। ১৭ জুলাই ২০২১ সালে অনুমোদিত ৫০০ কোটি টাকার সুকুকের মধ্যে বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ কমিশনের অনুমোদনের শর্ত লঙ্ঘন করে ৩২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে—যা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের স্বার্থের মারাত্মক ক্ষতি করে।
বিএসইসি আরও জানায়, এসব অনিয়মের ঘটনায় বেক্সিমকোর পরিচালক নাসিমা রহমান, ড. শামসুন আহমেদ ও এ. এম. আহসান উল্লাহকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে।
আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক শুদ্ধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়াও, রেটিং প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে (ইসিআরএল) ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সুকুকের গ্রিন ভ্যালিডেশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইসিআরএল এবং নিরীক্ষক এমজে আবেদিন অ্যান্ড কো., চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ভূমিকা নিয়েও তদন্ত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরএন