ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি ফের বাড়ছে। এর ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক ভাঙ্গনস্থলে পানি ঢুকে পরশুরাম উপজেলার অলকা গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) স্থানীয়রা জানান, বিগত ৩/৪ দিন ফেনীতে বৃষ্টিপাত না হলেও ভারতের ত্রিপুরায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে ভারতের উজান থেকে আসা পানিতে এখানে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সোমবার (২১ জুলাই) সকাল থেকে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টিপাত ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে গত ৮ জুলাই থেকে পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় তিনটি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪১টি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এর মধ্যে ৬টি ভাঙ্গনস্থানে মেরামত কাজ শেষ হয়েছে। ২৮টি স্থানে কাজ চলমান রয়েছে, এবং বাকি ৭টি ভাঙ্গনস্থানে বড় হওয়ার কারণে মেরামত কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।
ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রোববার রাত থেকে নদীর পানি আবারও দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে ভাঙ্গনস্থলগুলো দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বছরের (২০২৪ সালের) ভয়াবহ বন্যায়ও ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১০৪টি স্থানে ভাঙ্গন হয়েছিল। পরে ২০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দে বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও, বছর না পেরোতেই আবারও ভেঙ্গেছে। এসব ভাঙ্গনস্থল দিয়ে পানি প্রবেশ করে সোমবার সকাল থেকে পরশুরামের পশ্চিম অলকা, পূর্ব অলকা, নোয়াপুর, চিথলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম এবং ফুলগাজীর কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, পাউবোর যথাযথ তদারকি এবং অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিবছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়।
পরশুরামের পশ্চিম অলকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, "আমরা শুনেছি, এখানে তেমন বৃষ্টি না হলেও ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। এজন্য গত কয়েকদিন আগে বাঁধের যেসব স্থানে ভাঙ্গন হয়েছিল, তা দিয়ে নতুন করে পানি ঢুকে আবারও আমরা পানিতে ডুবছি। আমাদের এই দুর্ভোগ কখনোই শেষ হবে না।"
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, "ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টার দিকে মুহুরী নদীর পানি ৯.৬৪ মিটার পর্যায়ে প্রবাহিত হচ্ছে, যা বিপৎসীমার ২.৮৬ মিটার নিচে। পূর্বের ভাঙ্গনস্থলগুলো দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি বন্যার পর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ছোট বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও বড় বাঁধগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।"
ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, "এখানে বৃষ্টিপাত না হলেও ভারতের উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে পূর্বের ভাঙ্গনস্থলগুলো দিয়ে পানি ঢুকে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সম্প্রতি বন্যার পর তিনটি নদীর ছোট বাঁধগুলো মেরামত করা হলেও বড় বাঁধগুলো মেরামত করা সম্ভব হয়নি।"
এটি/আরএন