খরস্রোতা পাহাড়ি চেল্লাখালী নদীতে আমার বসতঘর ভেঙে গেছে। এখন থাকার ঘর নেই। এখন আমি স্ত্রী-পুত্রসহ খুব কষ্টে আছি। সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে একটি ঘর পেলে আমি শান্তিতে পরিবার নিয়ে থাকতে পারতাম। এখন মাঝেমধ্যে সারারাত বাইরে বসে থাকতে হয়। একদিকে নদী ভাঙন, অন্যদিকে বন্যহাতির অত্যাচার—এ নিয়ে আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।
একবুক কষ্ট নিয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারোমারী বাজার সংলগ্ন চেল্লাখালী নদীর তীরবর্তী বাতকুচি পুরাতন ফরেস্ট এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মো. আয়নাল হক। তিনি দীর্ঘদিন যাবত চেল্লাখালী নদীর পাড়ে বসবাস করছেন। প্রতিবছর চেল্লাখালী নদীর বালু সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হলেও কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী ইজারার শর্ত ভঙ্গ করে নদীর তীর ভেঙে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করছেন। এর ফলে নদীর পাড়ের বাসিন্দাদের ঘরবাড়ি এখন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। আয়নাল হকের মতো নদী ভাঙনের ঝুঁকি নিয়ে বেশ কিছু পরিবার উপজেলার বুরুঙ্গা, বাতকুচি ও পলাশীকুড়া গ্রামে বসবাস করছে।
দরিদ্র আয়নাল হক স্ত্রী, সন্তান, মেয়ে, জামাই এবং নাতিসহ ১০ জন সদস্য নিয়ে তার বাড়ির দুটি ঘরে থাকতেন। অপরিকল্পিতভাবে নদীর পাড় ভেঙে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলনের ফলে মাটি ধ্বংস হয়ে একটি বসতঘর ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে ধ্বংস হয়ে পড়েছে বাড়ির আঙিনার ফলজ ও কাঠগাছ এবং বাঁশবাগান। এখন একটিমাত্র ঘরে পরিবারের ১০ জন সদস্যের বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ফলে পরিবারের ৬ সদস্য বর্তমানে অন্যের বাড়িতে রাত্রীযাপন করছেন। অসহায় আয়নাল হক দিন মজুরি করে কোনো রকমে সংসার চালান। নতুন করে একটি বসতঘর নির্মাণ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়, বলছেন গ্রামবাসী।
ভুক্তভোগী আয়নাল হক বলেন, চেল্লাখালী নদীটি চলতি বছর বালু উত্তোলনের জন্য সরকারিভাবে ইজারা দেওয়া হয়নি। তবে গত বছর ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরের শেষ দিকে কিছু অসাধু বালু ব্যবসায়ী ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত নদীর পাড় ভেঙে গভীর গর্ত খুঁড়ে বালু উত্তোলন করেছে। এর ফলে নদীর পাড় ভেঙে আমার বাড়ির একটি ঘর নদীতে চলে গেছে। বাকি একটি ঘর ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
বর্তমান বর্ষা মৌসুমে প্রবল বেগে নদীতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ভাঙনের পরিধি দিন দিন বাড়ছে। আবার যদি এই নদী নতুন করে ইজারা দেওয়া হয়, তবে নদীর তীরের মানুষ আর বাড়িতে থাকতে পারবে না। বেশির ভাগ বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পরিবারের ১০ জন সদস্য নিয়ে খুব কষ্টে বসত-ভিটায় বসবাস করে আসছি। আমি যদি একটি সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে একটি বসতঘর পেতাম, তাহলে স্ত্রী, সন্তানাদি নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম।
তিনি আরো জানান, নদী তীরবর্তী বাতকুচি ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন গ্রামটি পাহাড়ঘেঁষা। এই গ্রামে প্রায় সময়ই বন্যহাতি তাণ্ডব চালায়। যখন বন্যহাতির উপদ্রব বেড়ে যায়, তখন ঘরবাড়ি ছেড়ে দিয়ে সারারাত বাইরে বসে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। একদিকে নদী ভাঙন, অন্যদিকে বন্যহাতির অত্যাচার—আমরা আর সহ্য করতে পারছি না। তাই সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে একটি বসতঘর প্রাপ্তির দাবী জানাচ্ছি।
এমএস/আরএন