ভারী বৃষ্টি ও ভারতের উজানের পানিতে বছর না পেরোতে ফের বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ধলছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলা। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থান ভেঙে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে ডুবছে একের পর এক জনপদ। এতে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ।
পানিতে নিমজ্জিত রয়েছেন পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী ও ফেনী সদর উপজেলার ১০৮ গ্রামের মানুষ। এতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। মানুষ খাবার ও পানীয় জলের সংকটে চরম কষ্টের মাঝে জীবনযাপন করছেন। তলিয়ে গেছে কৃষি জমি, সবজি ক্ষেত, পুকুরের মাছ, রাস্তাঘাট সবই। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যে খিচুড়ি খাবার দেয়া হচ্ছে তাও অপ্রতুল।
এদিকে, খড়ের গাঁদা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পশু খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে। জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার বৃষ্টিপাত না থাকায় উজানের পানি প্রবাহ কমেছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলার পানি ভাটির দিকে নামতে শুরু করেছে। এতে ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, ফেনী সদর ও দাগনভূঞা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি হলে পানি আরও বাড়বে এবং আরও নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হবে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে বানভাসিদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবি। ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ফেনীস্থ সেনাবাহিনীর সূত্র জানায়, বন্যার্ত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য ট্রাইশার্ক বোট, ওবিএম ইঞ্জিন এবং লাইফ জ্যাকেট মোতায়েন করা হয়েছে। যা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে ব্যবহার করা হচ্ছে। বন্যাকবলিত পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া এলাকায় উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।
ফেনী ব্যাটালিয়ন (৪ বিজিবি) জানিয়েছে, ফুলগাজী উপজেলার আলী আজম প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসা আশ্রয় কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত এলাকার বিভিন্ন স্থানে ফেনী ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনসহ বিজিবি সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণের মধ্যে খাবার বিতরণ কার্যক্রম চালু রেখেছে।
ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি'র আহ্বায়ক ও ফেনী-১ আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনু বৃহস্পতিবার থেকে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকার আশ্রয় কেন্দ্র ও বিভিন্ন স্থানে খিচুড়ি ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছেন।
বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে ফুলগাজী উপজেলা আমজাদ হাট ইউনিয়ন দক্ষিণ ধর্মপুর ইসলামিয়া বাজার আশ্রয় কেন্দ্রে ও নোয়াজ ফয়জুন্নেসা দাখিল মাদ্রাসায় ও মনিপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শুকনো খাওয়ার ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেছেন, 'শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত নদীর পানি বিপদসীমার ৩ দশমিক ০৭ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা কবলিত উপজেলার আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৮২টিতে প্রায় ৯ হাজার ২০০ মানুষ অবস্থান করছেন।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার আংশিক অংশে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরা উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য সাড়ে ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে খাদ্য ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও মজুদ রয়েছে। কোনো এলাকায় সহায়তা পৌঁছাতে দেরি হলে কিংবা না পৌঁছালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সাথে যোগাযোগের অনুরোধ রইলো।