ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজানের পানির কারণে বছর না পেরোতে ফের বন্যার কবলে পড়েছে ফেনীর পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলা। এই তিন উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রামে প্লাবনের খবর পাওয়া গেছে।
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজানের পানি নেমে আসায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২১টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। ফলে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে একের পর এক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গিয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানির পরিমাণ আরও বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমে অংশ নেয়।
ফেনীস্থ সেনাবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযানের জন্য স্পিডবোট আনা হয়েছে। পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ইতোমধ্যেই উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ছাগলনাইয়ার দক্ষিণ সতর এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, “দুপুর থেকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তীব্র স্রোতে পানি ঢুকে ঘরবাড়িসহ সবকিছু ডুবে যাচ্ছে। গেল বছরের বন্যাতেও এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। দেশে সরকার বা ক্ষমতা বদল হলেও আমাদের ভাগ্য বদলায় না।”
আরেক বাসিন্দা, সফিকুল ইসলাম বলেন, “সড়কে পানি থাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। আমরা উৎকণ্ঠায় আছি।”
ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর গ্রামের রিমেল হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ ও নেটওয়ার্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখনো কোনো ধরনের শুকনো খাবার বা প্রশাসনিক সহায়তা পাইনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তার দায়সারা কাজের কারণেই প্রতিবছর এমন দুর্ভোগে পড়তে হয়। গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আবারও এমন পরিস্থিতি।”
ফুলগাজীর জঙ্গল ঘোনা গ্রামের রাবেয়া খাতুন বলেন, “পানীয় জলের অভাব। আমাদের টিউবওয়েল ডুবে গেছে। এখন বৃষ্টির পানি ভরসা। রান্নাঘরের চুলায় পানি ঢুকে যাওয়ায় গত দুদিন ধরে রান্না বন্ধ। শুকনো খাবার খেয়েই কোনোভাবে টিকে আছি।”
ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, “জেলায় টানা চার দিন ধরে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) দুপুর ৩টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৩.১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবারও হালকা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।”
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবুল কাশেম বলেন, “বেলা ২টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে নদীর পানি কমলেও ভাঙা স্থান দিয়ে পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি কমার পরেই বাঁধ মেরামতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, “বিজিবি সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করা খাবার সরবরাহসহ উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। আমরা গতকাল থেকেই দুর্গত এলাকায় কাজ করছি।”
ফেনীর জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার আংশিক এলাকায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। সেনাবাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। জেলার ছয় উপজেলায় ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য ১৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
এটি/আরএন