খুলনার কয়রায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধে ২৫টি স্লুইস গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি অকেজো আর ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে ১৬ টি।
জানা গেছে, ষাটের দশকে নির্মিত স্লুইস গেটগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে লোনা পানি থেকে ফসল রক্ষা ও মিষ্টি পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। খালগুলোয় পানি প্রবাহ না থাকায় আমন আবাদে বিঘ্ন ঘটছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ১৩-১৪/২ পোল্ডারে ১৬টি স্লুইস গেটের মধ্যে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন সংলগ্ন সুতির অফিস, গড়িয়াবাড়ি, নয়ানি, কুশডাঙ্গা, কাঠমারচর এবং ১৪/১ পোল্ডারে সাতটি স্লুইস গেটের মধ্যে ওড়াতলা, পদ্মপুকুর, বিনাপানি ও হাজতখালী সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার (০৮ জুলাই) সকালে কয়রা সদর ও উত্তর বেদকাশী ইউনিয়ানের সীমানায় গড়িয়াবাড়ি স্লুইস গেট ধসে গেছে। দীর্ঘদিন অকেজো এসব স্লুইস গেট পুনর্নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দাবি জানিয়ে এলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
গেটগুলো দিয়ে কোনো রকমে পানি সরবরাহ চালু থাকলেও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে নাকশা, মসজিদকুড়, আমাদী, খোড়লকাঠী, শালুকখালী, হোগলারখাল, লালুয়া, নারায়ণপুর, গোবিন্দপুর, সুতিবাজার, গড়ীয়াবাড়ী, জোড়শীং ও কয়রা স্লুইস গেট। বেশির ভাগ স্লুইস গেট ভাঙা, কোনোটির একটি দিয়ে পানি ওঠানামা করলেও অন্যটি ভাঙ্গা।
আবার অনেকাংশে দেখা যায়, দুটি গেটই সম্পূর্ণ আটকানো। এগুলো কখনো ওঠানো কিংবা নামানো যায় না। এগুলোতে মরিচা ধরে আটকে রয়েছে। ভাঙা গেট দিয়ে সব সময় জোয়ারের পানি ভেতরে প্রবেশ করে ও ভাটা হলে নেমে যায়। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বেশির ভাগ অকেজো হয়ে পড়েছে। তদারকির অভাবে এসব মূল্যবান সম্পদ দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ানের ৬ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম (কারিম) বলেন, 'দীর্ঘদিন গড়িয়াবাড়ি স্লুইস গেটটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানো হলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এখন আমন আবাদের মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু স্লুইস গেটটি ধসে যাওয়ায় পানি সরবরাহ করতে পারছেনা।'
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কয়রা উপজেলা সভাপতি মোস্তফা শফিকুল ইসলাম বলেন, 'নব্বইয়ের দশকে বেশির ভাগ স্লুইস গেট নির্মিত হলেও পরে তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে অনেকগুলো স্লুইস গেট একেবারে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। যেগুলো সচল রয়েছে তার বেশির ভাগের কপাট ভেঙে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
কয়রা ইউনিয়নের (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান এস এম লুৎফর রহমান বলেন, 'গড়িয়াবাড়ি স্লুইস গেটটি কয়রা ও উত্তর বেকাশী ইউনিয়নের সীমানায় অবস্থিত। স্লুইস গেট দিয়ে দুই ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা জমির পানি সরবরাহ করে থাকে। দীর্ঘদিন স্লুইস গেটটি মেরামত না করায় ঝুঁকিপূর্ণ গেটটি বুধবার ধসে গেছে।'
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবীদ সজ্ঞয় কুমার সরকার বলেন, 'আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রণোদনা কার্যক্রমের আওতায় দুই হাজার ৪০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। কৃষকদের আদর্শ বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।'
খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, 'গড়িয়াবাড়ি স্লুইস গেটের ধসের খবর পেয়ে মেরামতের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক স্লুইস গেট মেরামত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্লুইস গেটগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের কাজ শুরু হবে।'
এমএম/এমএ