‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে যারা আহত হয়ে হাসপাতালে ছিলেন, মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে সেই আহতদের মুখে থুতু মেরেছে অত্যাচারী শেখ হাসিনা। অতএব, শহীদ ও আহতদের মুখে যারা থুতু মেরেছে, সেই স্বৈরাচারের রাজনীতি বাংলাদেশে আর কখনও চলতে দেওয়া হবে না।’ – এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের’ স্মরণে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে ‘ইবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’।
উপাচার্য বলেন, ‘আপনি-আমি এখন যে গণতন্ত্র ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলছি, সেই কথা বলার সার্টিফিকেট আপনাকে আগে দেওয়া হয়নি। এই নিশ্চয়তা ও মুক্তি এনে দিয়েছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের শহীদদের রক্ত। এই রক্তের ঋণ আমরা কোনোদিন শোধ করতে পারব না। একটি জাতিকে জুলুম ও স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করতে তারা শাহাদাত বরণ করেছেন। তাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।
আপনারা দেখেছেন, তারা গুলির সামনে বুক পেতে দিয়েছে এবং শহীদ হয়েছেন। সেদিন কোনো দল-মত ছিল না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জালিমকে বিতাড়নের জন্য কাজ করেছে। ৫ই আগস্টে গোটা জাতি, বিশেষ করে ছাত্রসমাজ যে উল্লাস-আনন্দ প্রকাশ করেছে, তা ভোলার নয়।
১৬৮১ জন শহীদের রক্ত আর অগণিত আহতের বিনিময়ে এ বিজয় এসেছে। আপনারা যারা আহতদের ছবি দেখেছেন, জানেন—তাদের একসময় মুখ, চোখ, হাত-পা ছিল, কিন্তু এখন অনেকে এমন অবস্থায় আছেন, যাদের দিকে তাকানো যায় না। তাদের অনেকেরই মুখ, চোখ, হাত-পা আর স্বাভাবিক নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি-আমি দায়িত্ব পালন করছি, রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছি, কিন্তু যারা চোখ হারিয়েছে, যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাতিকে মুক্তি দিতে এগিয়ে এসেছে—তাদের জন্য আমাদের দোয়া করা উচিত। আমরা ব্যক্তিগতভাবে আজীবন তাদের জন্য দোয়া করব, এই প্রতিজ্ঞা আমাদের রাখতে হবে।
এই বিপ্লব হয়েছিল একটি ঐক্যবদ্ধ, বৈষম্যহীন ও সুন্দর বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে। আমাদের প্রত্যয় হবে, এই সংগ্রাম ও আদর্শকে চিরকাল ধারণ করা।
যারা এখানে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ রয়েছেন, তাদের মনে রাখতে হবে—সবচেয়ে বড় হলো শহীদের রক্ত। এই রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট রেজিমের ছাত্র সংগঠনকে বিতাড়ন করা হয়েছে। তারা আর বাংলাদেশে কাজ করতে পারবে না।’
উপাচার্য আরও বলেন, ‘কোনো শহীদ, আহত বা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির পরিবারের কেউ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়, তাদের ভর্তি ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। আমরা সেই নিশ্চয়তা দিয়েছি। কেউ এ ধরনের খবর দিলে আমরা বিবেচনায় এনে ব্যবস্থা নেব।
তোমরা যারা আন্দোলনের গাজী, তোমরা চিরকাল আমাদের মনে থাকবে। তোমাদের সহযোদ্ধা অন্য ছাত্র সংগঠনের কথাও মানুষ স্মরণে রাখবে। শান্তি, মুক্তি ও ঐক্যের ভিত্তিতে আমরা আগামী দিনের পথে এগিয়ে যাব।’
দোয়া মাহফিলে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মামুনুল হক, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হক, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর প্রধান সমন্বয়ক এস এম সুইট ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আশরাফ উদ্দীন খান।
জেআর/আরএন