কুড়িগ্রামের উলিপুরে অপূর্ব নির্মাণ শৈলির মুন্সিবাড়িটি অযন্ত আর অবহেলায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মুঘল আমলের স্থাপনায় সঙ্গে মিল রেখে ব্রিটিশদের আদলে বিভিন্ন কারুকার্যে অপরুপ সৌন্দর্যে বানানো বাড়িটি যেন কোন শিল্পীর হাতে আঁকা এক চিলতে ছবি। মুন্সিবাড়িটি দেখতে প্রতিদিন শতশত নারী পুরুষ ভীড় জমান। ধ্বসে পড়া ইট আর কারুকার্যের সৌন্দর্য্য এখনও আকর্ষণ করে প্রতিটি মানুষকে। মনের মাধুরী দিয়ে সাজানো বাড়িটি যেন আক্ষেপ তৈরি করে দর্শনার্থীদের।
উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার দুরে ধরনীবাড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত মুন্সিবাড়িটি ৩৯ একর জমির আঠারো শতকে নির্মাণ করেন জমিদার বিনোদ লালের পালিত পূত্র ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সি। কথিত আছে, কাশিম বাজার এস্টেটের সপ্তম জমিদার কৃষ্ণনাথ নন্দী একটি খুনের মামলায় আদালত কক্ষে দাড়ানো অসম্মানজনক মনে করে ১৮৪৪ সালে নিজ বাড়িতে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী মহারাণী স্বর্ণময়ী জমিদারীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হলে তার অধিনে হিসাব রক্ষকের কাজ করতেন বিনোদ লাল মুন্সি। এসময় মহারাণী স্বর্ণময়ীর অনুমতি নিয়ে বিনোদ লাল মুন্সি এই স্থানে নিপুন কারুকার্যে খচিত অপরুপ সৌন্দর্য্যরে নির্মাণ শৈলি দিয়ে বাড়িটি তৈরি করেন। বাড়িটিতে প্রথম তলায় তিনটি কক্ষ রয়েছে। একটি কক্ষে ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সির প্রতিকৃতি ছিল। যা মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনী বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে নষ্ট করে দেয়। নিঃসন্তান ব্রজেন্দ্র লাল মুন্সি ১৯৬০ সালে মারা গেলে তার স্ত্রী আশালতা মুন্সি বিহারী লাল নামের একটি ছেলেকে দত্তকপূত্র হিসেবে নেন। আশালতা মুন্সি ১৯৭১ সালে মারা গেলে তাদের সব বংশধর কলকাতা চলে যান। মামলা-মোকদ্দমার কারণে কয়েক দফা মালিকানার হাত বদল হলে পুরাকীর্তি হিসেবে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয়।
এই অট্রালিকা ছাড়াও বেশ কয়েকটি মন্দির,পশ্চিম পাশ্বে একটি উন্মূক্ত মঞ্চ, তুলসী পাঠ, মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে স্নানের স্থান। বাথরুমের ভিতরে একটি কূপ, অট্রালিকার সামনে একটি বিশাল সূর্য-পুকুর রয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটির নাট মন্দির, দূর্গা মন্দির, বিষ্ণ মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, শিব মন্দির, শয়ন ঘর, ডাইনিং রুম, রান্নাঘর,অঙ্কণ রুম এখনও দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে। উপরের তলায় বিশ্রাম রুম ও বাথরুম ছিল। যা এখন নষ্ট হযে গেছে।
বর্তমানে ভবনটি সংস্কারের কোন উদ্যোগ না নেয়ায় ঐতিহ্যবাহী মুন্সিবাড়িটি হয়তো এক সময় মানুষের স্মৃতির অন্তরালেই চলে যাবে। এলাকাবাসী ও দর্শনাথিদের জোরদাবী প্রত্নতত্ব বিভাগ যেন বাড়িটির দ্রুত সংস্কার কাজ করে বাড়িটির ঐতিহ্য হিসেবে ধরে রাখার ব্যবস্থা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার সাহা বলেন, এ অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য সমৃদ্ধ মুন্সিবাড়ির পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে প্রত্নতত্ব বিভাগে পত্র প্রেরণ করা হবে।
জেডএএস/এসআর