শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পলাশীকুড়া-বাতকুচি পাহাড়ি এলাকায় প্রবাহিত খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর ওপর নির্মিত মিনি স্টিল ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় অন্তত ১০ গ্রামের হাজারো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশেষ করে পারাপার ও কৃষিপণ্য বিক্রিতে ব্যাপক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে দুই পাড়ের মানুষকে ৫-৬ কিলোমিটার পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে। ফলে ভুক্তভোগীরা দ্রুত নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
জানা গেছে, কয়েক বছর আগে এলজিএসপির অর্থায়নে পলাশীকুড়া ও বাতকুচি এলাকার চেল্লাখালী নদীর ওপর মিনি স্টিল ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে ব্রিজটি নদীতে ভেঙে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়, যা এবারের পাহাড়ি ঢলে আবারও ভেঙে গেছে।
ফলে দুই পাড়ের মানুষ বর্তমানে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। স্থানীয় বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষিকা সুমী আক্তার জানান, এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, পলাশীকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম রওশন আরা একাডেমি, হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং প্রাপ্তি একাডেমিতে যাতায়াত করে। ব্রিজ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের পারাপারে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে।
এলাকার আরও কয়েকজন বাসিন্দা—আসাদুজ্জামান, আজিজুল হক, বিল্লাল হোসেন ও আব্দুল বারেক—জানান, বাতকুচি গ্রামটি পাহাড়ঘেঁষা হওয়ায় মাঝে মধ্যেই বন্যহাতির আক্রমণে মানুষ নদী পার হয়ে আশ্রয় নেয় পাশের গ্রামে। কিন্তু ব্রিজ না থাকায় তখনও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া কৃষিপণ্য বাজারে নিতে ৫-৬ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়।
এই নদী পার হয়ে মধুটিলা ইকোপার্ক, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বাতকুচি, মেষকুড়া, সমশ্চুড়া, বারমারী বাজার, পলাশীকুড়া, আন্ধারুপাড়া, ডালুকোনা, শেকেরকুড়া ও বোনারপাড়া গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন।
গত তিন বছর ধরে ব্রিজটি ভেঙে থাকায় শিক্ষার্থী, কৃষক, নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা বিশেষভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এমনকি পাশের বারমারী বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে গেলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই এলাকাবাসী দ্রুত নতুন ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা মো. জামাল উদ্দিন জানান, ভোগান্তি কমাতে গত বছর পরিবেশ ও মৃত্তিকা অধিদপ্তরের একটি দল এলাকা পরিদর্শন করেছে। এলজিইডির প্রকৌশলীরাও মাপঝোক করেছেন এবং নতুন ব্রিজ নির্মাণের কথা বলেছেন। তবে এখনো কাজ শুরু হয়নি। তিনি দ্রুত ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে নালিতাবাড়ী এলজিইডি উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া পিয়াল বলেন, চেল্লাখালী নদীর ওই স্থানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এলজিইডির পক্ষ থেকেও প্রাথমিক জরিপ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু হবে।
এমএস/আরএন