চলতি মৌসুমে রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট অঞ্চলের আমচাষি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। বাজারে আমের চাহিদা কম এবং একসঙ্গে গাছে আম পেকে যাওয়ায় দাম অস্বাভাবিকভাবে পড়ে গেছে। অনেকেই প্রতি কেজিতে অন্তত ৭ টাকা লোকসানে আম বিক্রি করছেন।
চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার আমের উৎপাদন ভালো হলেও বাজারে দাম নেই বললেই চলে। ফলে উৎপাদন খরচই উঠে আসছে না।
বাঘার 'সাদি এন্টারপ্রাইজ'-এর স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম ছানা জানান, চলতি মৌসুমে তাঁর ১৫০ বিঘা জমির বাগানে আম হয়েছে। গত বছর তিনি ২২ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করলেও এবার এক কেজিও রপ্তানি করতে পারেননি।
তিনি বলেন, “গত বছর লখনা আমের দাম ছিল মণপ্রতি ৯০০ টাকা, এবার তা নেমে এসেছে ৫০০ টাকায়। হিমসাগর, আম্রপালি, ন্যাংড়াসহ অন্যান্য জাতের আম একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহ সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি, আম পাকার মৌসুমে কোরবানির ঈদ হওয়ায় শহরের মানুষ গ্রামে চলে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কমে গেছে। ফলে চাহিদা আরও কমেছে। এটা আমাদের জন্য বড় ক্ষতির কারণ।”
বর্তমানে বাজারে হিমসাগর বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ১৪০০-১৬০০ টাকায়, ন্যাংড়া ১৩০০-১৪০০, আম্রপালি ১৪০০-১৮০০, ফজলি ৬০০-৭০০ এবং লখনা মাত্র ৫০০ টাকায়। অথচ গত বছর এসব আমের দাম ছিল দ্বিগুণেরও বেশি।
চারঘাটের আমচাষি খায়রুল ইসলাম জানান, “সব জাতের আম একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে। কিন্তু চাহিদা না থাকায় দাম অনেকটাই কমে গেছে। অনেকেই উৎপাদন খরচেরও নিচে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।”
চকছাতারি গ্রামের আম ব্যবসায়ী মুক্তার আলী বলেন, “আম বাগানে ২৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে ১২ লাখ টাকার মতো। আশা করছি, সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি হবে। অর্থাৎ ৮ লাখ টাকা লোকসান হবেই।”
অন্যদিকে, আম পরিবহন, ঝুড়ি, কুরিয়ার ও শ্রমিক খাতে জড়িতদের আয় খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। কুলি শ্রমিক নেতা আমিরুল ইসলাম বলেন, “আমের দাম কম হলেও একজন কুলি প্রতিদিন ৮০০-১০০০ টাকা আয় করছে। মৌসুমজুড়েই আমাদের আয় ভালো থাকে।”
নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তারাও বাজার ধরতে চেষ্টা করছেন ভিন্নভাবে। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কলেজছাত্র সোহানুর রহমান (শাওন) ‘ফুটস অ্যাডড্রেস’ নামে একটি অনলাইন পেজ খুলে সরাসরি গ্রাহকের কাছে আম সরবরাহ করছেন। তিনি জানান, “বাছাই করা আম কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি। চাহিদা কমলেও হিমসাগরের প্রতি আগ্রহ এখনো বেশি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক ব্যবহার, বৈরী আবহাওয়া এবং আম সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তারা আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কুটির শিল্প গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন, যাতে মৌসুম শেষে ধাপে ধাপে আম বাজারজাত করা যায়।
এফএ/আরএন