খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার রামগড়, ফটিকছড়ি ও জোরারগঞ্জ সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক ও বিভিন্ন পণ্যের চোরাচালান উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এসব এলাকায় সীমান্ত সুরক্ষায় নিয়োজিত ৪৩ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (রামগড় জোন) নিয়মিত অভিযান এবং কঠোর নজরদারির ফলে সীমান্ত অপরাধ হ্রাস পেয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই অঞ্চলে ভারী বা হালকা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অভাবে বহু মানুষ একসময় মাদক ও চোরাচালানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তেন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভারত থেকে অবৈধ পণ্য এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিজিবির নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি ও সাঁড়াশি অভিযানের ফলে এই প্রবণতা অনেকটাই কমে এসেছে।
রামগড়ের লাচারীপাড়া, কাঁশিবাড়ি, বল্টুরাম, জগন্নাথপাড়া, সোনাইপুল, আনন্দপাড়া, ফেনীরকুল; ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজার, বাঘমারা, বড়বিল, জৈতিরচর, রহুল আমিনের চর, হেয়াকো এবং জোরারগঞ্জ উপজেলার বালুটিলা, আমতলা, কয়লামুখসহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে একসময় অনায়াসে ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, চোলাই মদ ও ভারতীয় ব্র্যান্ডের মদ প্রবেশ করত। বর্তমানে এসব এলাকায় বিজিবির কঠোর অভিযানের কারণে চোরাকারবারিরা গা-ঢাকা দিতে বাধ্য হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান বলেন, “গত বছর পর্যন্ত এই সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মাদক আসত। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর বিজিবি আগের চেয়ে অনেক কঠোর অবস্থানে গেছে। এর ফলে শুধু মাদক নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফও এখন অনেকটা পিছু হটেছে।”
সীমান্তে বসবাসকারী ক্রাসাই মারমা বলেন, “নদীর ওপারে আমাদের চাষের জমিতে আগে বিএসএফ কাজ করতে দিত না। এখন বিজিবির অবস্থানের কারণে আমরা জমিতে কাজ করতে পারছি, গাছ কাটতেও পারছি।”
রামগড় উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি শাহ আলম বলেন, “দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে সীমান্ত দিয়ে মাদক প্রবেশ বন্ধ করা জরুরি। আমরা বিজিবির নিয়মিত নিরাপত্তা সভায় এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের চলমান অভিযান চালু থাকলে একদিন রামগড়সহ পুরো সীমান্ত অঞ্চল মাদক ও চোরাকারবারি মুক্ত হবে।”
বিজিবির রামগড় ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আহসান উল ইসলাম সম্প্রতি ফেনীরকুল সীমান্ত পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, “পুশইন (অবৈধ অনুপ্রবেশ) আশঙ্কায় আমরা ভারতকে কঠোর ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছি। সীমান্তে মাদক, চোরাচালান ও চামড়া পাচার প্রতিরোধে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। বেআইনি কার্যক্রম রুখতে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি।”
স্থানীয়দের মতে, বিজিবির এ ধরনের সুনির্দিষ্ট ও অব্যাহত তৎপরতা সীমান্ত নিরাপত্তা এবং মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখছে।
কেএস/আরএন