বান্দরবানের আলীকদমে ক্রিসতং-রুংরাং পাহাড়ে ট্রেকিং করতে গিয়ে দুই পর্যটকের মৃত্যু এবং একজন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকভিত্তিক একটি ট্যুর গ্রুপের অ্যাডমিন বর্ষা ইসলাম বৃষ্টিকে (২৪) ‘গাফিলতির অভিযোগে’ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বর্ষা ইসলাম যশোর জেলার চৌগাছা থানার জগদীশপুর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আড়পাড়া এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলামের কন্যা।
শনিবার (১৪ জুন) সকালে বর্ষাকে আসামি করে আলীকদম থানায় মামলা করেন নিহত পর্যটক স্মৃতি আক্তারের পিতা হাবিবুর রহমান। আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা জহির উদ্দিন এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, বর্ষা ইসলাম বৃষ্টি তার ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছাড়াই এবং প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন ট্যুরের আয়োজন করতেন। তার আয়োজিত ‘ক্রিসতং-রুংরাং সামিট (৩০তম)’ অভিযানে অংশ নিতে স্মৃতি আক্তার গত ৮ জুন আলীকদমে যান। এরপর থেকেই তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অবশেষে শুক্রবার (১৩ জুন) তৈন খালের মোড় এলাকা থেকে স্মৃতির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এজাহারে আরও বলা হয়, বর্ষা ইসলাম স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই মাত্র একজন গাইড (সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা) নিয়ে ৩৩ জনের একটি বড় দলকে দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যান। তিনি অংশগ্রহণকারীদের আবহাওয়া ও পথের ঝুঁকি সম্পর্কে কোনো সতর্কতা দেননি। গত ৯ জুন তারা রুংরাং-ক্রিসতং ট্রেইলে যাত্রা শুরু করে। বর্ষা নিজে ১২ জন এবং গাইডকে নিয়ে একদিকে যান, যার মধ্যে স্মৃতি আক্তারও ছিলেন। বাকি ২২ জন পর্যটককে আরেকজন অননুমোদিত সংগঠক মো. হাসান চৌধুরী শুভ’র তত্ত্বাবধানে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ১১ জুন শামুক ঝরনা এলাকায় পাহাড়ি ঢলে স্মৃতি আক্তার, হাসান চৌধুরী শুভ এবং শেখ জুবাইরুল ইসলাম নিখোঁজ হন। ১২ জুন জুবাইরুল এবং ১৩ জুন স্মৃতির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন হাসান চৌধুরী শুভ।
স্মৃতির বাবা মামলার বাদী হিসেবে অভিযোগ করেন, বর্ষা ইসলামের দায়িত্বহীনতা, অভিজ্ঞতার অভাব ও প্রস্তুতির ঘাটতির কারণেই তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
তবে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বর্ষা দাবি করেন, তিনি একটি পাঁচ দিনের আলাদা ট্যুরে ছিলেন এবং দুর্ঘটনাটি ঘটে অন্য একটি তিন দিনের ট্যুরে, যার দায়িত্বে ছিলেন নিখোঁজ কো-অপারেটর মো. হাসান চৌধুরী।
আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবদুল্লাহ আল মুমিন জানান, উপজেলার বাইরে কোনো পর্যটক গেলে স্থানীয় পর্যটন সেবাকেন্দ্রে নাম-ঠিকানা নিবন্ধন এবং প্রতি ১০ জনের জন্য একজন করে অনুমোদিত গাইড নেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু বর্ষা ইসলাম ১২ জনের নাম দিয়ে ৩৩ জনের জন্য মাত্র একজন গাইড নিয়েছিলেন। ১২ জন গাইডসহ ভ্রমণে গিয়েছিলেন, আর ২২ জনকে কোনো গাইড ছাড়া ফেরত পাঠানো হয়। এতে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে তিনজন নিখোঁজ হন, যাদের মধ্যে একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৯ জুন বর্ষার নেতৃত্বে ‘ট্যুর এক্সপার্ট’ গ্রুপের ৩৩ জন পর্যটক আলীকদম যান। কো-হোস্ট ছিলেন হাসান এবং স্থানীয় গাইড ছিলেন সিদ্ধার্থ তঞ্চঙ্গ্যা। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ক্রিসতং পাহাড়, থানচির লিমান লিবলু এবং সাকাহাফং চূড়া জয় করা। পরে দলটি দুটি ভাগে বিভক্ত হয়। তৈন খাল পার হওয়ার সময় ১৯ জন নিরাপদে পার হলেও স্রোতের তোড়ে হাসানসহ তিনজন ভেসে যান। অতিবৃষ্টির কারণে প্রবল স্রোতে নিখোঁজ হন স্মৃতি আক্তার, হাসান চৌধুরী শুভ ও শেখ জুবাইরুল ইসলাম।
১৩ জুন স্মৃতির এবং আগের দিন জুবাইরুল ইসলামের মরদেহ পাওয়া গেলেও এখনও নিখোঁজ রয়েছেন হাসান চৌধুরী শুভ।
বান্দরবানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিনিয়া চাকমা জানান, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে স্মৃতির বাবার করা মামলার ভিত্তিতে বর্ষাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
বিএ/এসডি/আরএন