গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে পবিত্র হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আজ শুক্রবার (৬ জুন) ফজরের নামাজের পর থেকেই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুসলমানদের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। নামাজের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি।
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জসহ প্রায় ৪০টি গ্রামে ঈদুল আযহা উদযাপন করছেন হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরীফ ও চট্টগ্রামের মির্জাখিল দরবার শরীফের অনুসারীরা। আজ সকালে সাদ্রা ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাতের ইমামতি করেন সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীর মাওলানা মুফতি জাকারিয়া আল মাদানী।
এছাড়াও অন্যান্য মসজিদে ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মেঝো হুজুর মাওলানা আবু বকর মো. ইসমাইল, সেজো হুজুর মাওলানা আবুল খায়ের, মাওলানা আরিফুর রহমান সাদ্রাভীসহ দরবার শরীফের সাহেবজাদাগণ।
জানা গেছে, ১৯২৮ সাল থেকে হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর মাদ্রাসার তৎকালীন অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উদযাপন শুরু করেন। তখন থেকেই চাঁদপুরের প্রায় ৪০টি গ্রামের মানুষ রোজা ও ঈদ আগাম পালন করে আসছেন। তবে তারা জানান, সৌদি আরব নয়, বরং চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করেই তারা রোজা ও ঈদ পালন করে থাকেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, প্রতাপপুর, শমেসপুর, বলাখাল, দক্ষিণ বলাখাল, নিলাম বলাখাল, শ্রীপুর, মনিহার, বড়কুল, অলিপুর, উচ্চঙ্গা, বেলচোঁ, সেন্দ্রা, রাজারগাঁও, জাকনি, কালচোঁ, মেনাপুর, ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা, বাশারা, গোয়ালভাওর, কড়ইতলী, নয়ারহাট; মতলব উপজেলার মহনপুর, এখলাসপুর, দশানী, নায়েরগাঁও, বেলতলী; এছাড়াও কচুয়া ও শাহরাস্তির কয়েকটি গ্রাম এবং চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী জেলা নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, শরীয়তপুর ও চট্টগ্রামের কয়েকটি স্থানে মাওলানা ইসহাক খানের অনুসারীরা সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে একদিন আগেই ঈদ উদযাপন করেন।
এছাড়াও চট্টগ্রামের মির্জাখিল দরবার শরীফের অনুসারীরা মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি, লতুর্দী, সাতানী, দক্ষিণ মাথাভাঙ্গা, আমিয়াপুর, মধ্য ইসলামবাদ, গাজীপুর, মধ্য এখলাসপুর (বড়ইকান্দি), ফরাজীকান্দি, রামদাশপুর, চরমাছুয়া, হাজিপুর, দক্ষিণ রামপুর, সরকারপাড়া ও ঠাকুরপাড়া গ্রামেও একইভাবে ঈদ উদযাপন করে থাকেন।
তবে এসব গ্রামের সকল মানুষ যে সাদ্রা বা মির্জাখিল দরবার শরীফের অনুসারী তা নয়। স্থানীয়রা জানান, যারা অনুসারী, কেবল তারাই সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করেন।
এ বিষয়ে সাদ্রা দরবার শরীফের বর্তমান পীরের ছেলে সাহেবজাদা ড. বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, "আমরা সৌদি আরব নয়, বরং কোরআন ও হাদিসের আলোকে চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা পালন ও ঈদ উদযাপন করে থাকি।"
মাওলানা আরিফুর রহমান সাদ্রাভী বলেন, "পবিত্র কোরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে এবং চার মাজহাবের মধ্যে তিন মাজহাব অনুসারে আমরা রোজা ও ঈদ উদযাপন করি।"
এমএইচ/আরএন