কোরবানির ঈদ আসতে এখনও প্রায় তিন সপ্তাহ বাকি থাকলেও রাজশাহীর পশুহাটগুলো ইতোমধ্যেই জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে কোরবানির পশুর উপস্থিতি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার রাজশাহী অঞ্চলে কোরবানির পশুর সরবরাহ পর্যাপ্ত। বর্তমানে হাটে ছোট ও মাঝারি আকারের গরু বেশি দেখা যাচ্ছে। বড় গরুগুলো আরও কয়েকদিন পর হাটে উঠবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সর্বশেষ শুক্রবার রাজশাহীর তাহেরপুর হাটে অন্তত আড়াই হাজার গরু ও মহিষ কেনাবেচার জন্য আনা হয়। ব্যবসায়ীদের আশা, আগামী শুক্রবার এই সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়াতে পারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় গরুর হাট বসে সিটি বাইপাসে, যেখানে প্রতি রোববার ও বুধবার হাট হয়। ঈদের আগের তিন-চার দিন প্রতিদিনই হাট বসে। সর্বশেষ বুধবার সেখানে প্রায় ১০-১২ হাজার গরু উঠেছিল।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিভাগের ৩০২টি হাটে এবারের ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে। এর মধ্যে অধিকাংশ হাটে ইতোমধ্যে পশু কেনাবেচা শুরু হয়ে গেছে। শুধুমাত্র কিছু গ্রামীণ হাট এখনও শুরু হয়নি, তবে সেগুলোও আগামী সপ্তাহের মধ্যে চালু হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, এই ৩০২টি পশুহাটের মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী এবং ১৪১টি অস্থায়ী। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি বাইপাস হাট উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ গরুর হাট হিসেবে পরিচিত, যেখানে প্রায় ১৭ বছর ধরে সপ্তাহে দু’দিন হাট বসে। ঈদের সময় এ হাটে পশু বিক্রির পরিমাণ অনেক গুণ বেড়ে যায়।
এ বছর রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। কৃষক ও খামারিরা অনেক আগেই পশু পালন শুরু করেছেন এবং ইতোমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে। এখনো অনেকে পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত। বিশেষ করে মোটা জাতের গরু বিক্রি সাধারণত শেষ সময়েই বেশি হয়, তাই এসব গরুর পরিচর্যায় আরও মনোযোগ দিচ্ছেন খামারিরা।
রাজশাহী জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে মোট চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩টি গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু এক লাখ ১৫ হাজার ৭৪২টি, মহিষ চার হাজার ২৪০টি, ছাগল তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৩টি এবং ভেড়া ৩০ হাজার ১৪৮টি। এই সংখ্যাটি জেলার চাহিদার তুলনায় বেশি। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি, যার মধ্যে গরু ছিল ৮৩ হাজার ৩৬৫টি। অর্থাৎ এবার গত বছরের তুলনায় ৩০ হাজার ৬৯৭টি বেশি পশু প্রস্তুত রয়েছে।
তাহেরপুর হাটের গরু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, "এখনই হাটে অনেক গরু এসেছে। আগামী শুক্রবার আরও বেশি আসবে, হয়তো পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।"
সিটি বাইপাস হাটের খাটাল মালিক মতিউর রহমান জানান, "বর্তমানে প্রতি হাটে গড়ে ৮-১০ হাজার গরু আসছে। ঈদের আরও কাছাকাছি গেলে এ সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়াতে পারে। এখন ছোট ও মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। মোটা গরুর চাহিদা কম থাকায় তা শেষ সময়ে হাটে ওঠে, যখন দাম বেশি পাওয়া যায়।"
এই হাটের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক বলেন, "এখন গড়ে প্রতি কেজি মাংসের লক্ষ্য মূল্য ৭০০-৭৫০ টাকা ধরে গরু কেনাবেচা হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতি মণ গরুর দাম পড়ছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। মহিষও প্রায় একই দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে ঈদের কাছাকাছি গিয়ে দাম আরও বাড়তে পারে।"
গোদাগাড়ীর খামারি আমিনুল ইসলাম জানান, তার খামারে ১৪টি দেশি গরু ছিল। এর মধ্যে ছয়টি বাড়িতেই বিক্রি করেছেন। তিন মণের বেশি মাংস হবে এমন চারটি গরু তিনি এক লাখ ১০ হাজার টাকা করে বিক্রি করেছেন, আর তুলনামূলক ছোট দুটি গরু বিক্রি হয়েছে ৯৫ হাজার ও ৯৮ হাজার টাকায়।
তিনি আরও জানান, তার খামারে থাকা একটি গরু থেকে পাঁচ মণ মাংস হবে বলে তিনি আশা করছেন এবং সেটি তিন লাখ টাকায় বিক্রির পরিকল্পনা করেছেন। তবে বড় গরুগুলোর এখনও তেমন ক্রেতা পাননি এবং সেগুলো হাটেও তোলেননি। এখন হাটে নিয়ে গিয়ে দাম না পেলে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে, তাতে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা আছে।
সিটি বাইপাস হাটের ইজারাদার আমিনুল ইসলাম বলেন, "গত রোজার ঈদের পর থেকেই এবার হাটে গরুর সরবরাহ বেড়েছে। এর মানে, এবার গরুর জোগান পর্যাপ্ত। ইতোমধ্যে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকাররা হাটে এসে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দরদাম করে গরু কিনে নিচ্ছেন।"
আরএইচ/আরএন