Thursday | 23 October 2025 | Reg No- 06
Epaper | English
   
English | Thursday | 23 October 2025 | Epaper
BREAKING: কয়েকজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি জামায়াতের, জানালেন প্রধান উপদেষ্টাকে      সেন্টমার্টিন ভ্রমণে মানতে হবে ১২ নির্দেশনা      কোনো অন্যায় চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না নির্বাচন কমিশন: সিইসি      আত্মসমর্পণকারী সেনা কর্মকর্তারা নির্দোষ, অপরাধীরা পালিয়েছে: আইনজীবী      বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়নি, চেয়েছে নিরপেক্ষ ভূমিকা: আইন উপদেষ্টা      শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ      নাইজেরিয়ায় জ্বালানি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণে নিহত ৩৮      

চলনবিলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন: কৃষকের মুখে হাসি

Published : Saturday, 17 May, 2025 at 9:13 PM  Count : 239

চলনবিলের মাঠে পাকা ধানের ঘ্রাণের সঙ্গে মিশে আছে কৃষক সিদ্দিক মিয়ার মুখের আনন্দের হাসি। ধানের ভালো ফলন আর বাজারে ন্যায্য দাম পেয়ে তিনি গলা উঁচিয়ে বলেন— “চিন্তায় ছিলাম, ধান উঠলেই দাম পড়ে যাবে। অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হানা দিতে পারে। আল্লাহর রহমতে এবার ফলনও ভালো, দামও ভালো পাচ্ছি।” চলনবিলে এখন এমন শত শত মুখে হাসি, ঘরে শান্তি, মনে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-কৃষাণিরা।

‘শস্যভাণ্ডার’ হিসেবে পরিচিত চলনবিল এখন সোনালি ধানে ভরে উঠেছে। ধান কাটা, গলায় ভরা এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা। নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনার বিস্তীর্ণ এলাকাবেষ্টিত এই জনপদে এবার বোরো ধানের বাম্পার ফলনে কৃষকদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটলেও, শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন খরচের লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতিতে সেই হাসি কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। তবে বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় চলনবিলের কৃষকেরা আশান্বিত।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলনবিল এলাকায় এ বছর প্রায় ১ লাখ ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলায় ৩৬ হাজার হেক্টর, গুরুদাসপুরে ১৮ হাজার, বড়াইগ্রামে ১৫ হাজার হেক্টর ছাড়াও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় যথাক্রমে প্রায় ২২,৫০০ ও ৩০,৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে। তাড়াশে প্রায় ৩০% এবং উল্লাপাড়ায় প্রায় ৪০% ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। তবে পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ধান কাটা এখনও পুরোপুরি শুরু হয়নি। এই এলাকায় বিলম্বের পেছনে আবহাওয়া ও অন্যান্য ফসলের পরে ধান রোপণের বিষয়টি একটি কারণ।

চলনবিলে গড়ে প্রায় ৬২% ধান কাটা সম্পন্ন হলেও স্থানীয় কিছু এলাকায় এখনও কাজ বাকি রয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং উন্নত জাত ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ৭ টন ছাড়িয়েছে, যা বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি।

সিংড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ আহমেদ বলেন, “বোরো মৌসুমটি ছিল কৃষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। রোগবালাই ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব খুবই কম ছিল। মাঠ পর্যায়ে উন্নত জাত, সার ও বালাইনাশক ব্যবহারে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছিলাম। তার সুফল মিলেছে। আশা করছি চলনবিল থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে।”

চলনবিলের বিলশা গ্রামের কৃষক ফিরোজ হোসেন বলেন, “৪০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। খরচ ছিল অনেক— সার, কীটনাশক, ডিজেল, সেচ—সব খাতে খরচ বেড়েছে। প্রতিদিন শ্রমিক পেতে হিমশিম খেতে হয়েছে। তারপরও ফলন আর দাম ভালো পেয়ে চিন্তামুক্ত আছি। মিনিকেট ধান মণপ্রতি ১,৫০০ টাকা পাচ্ছি, যেখানে গত বছর ছিল ১,২০০ টাকা।”

তবে শ্রমিক সংকট চলনবিলের কৃষকদের বেশ ভোগাচ্ছে। তাড়াশ উপজেলার ভেটুয়া গ্রামের কৃষক রতন মোল্লা বলেন, “ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গেই কাটতে না পারলে ধান পড়ে যায়। এবার প্রথম দিকে শ্রমিক ছিল না। যারা ছিল, তারা মাথাপিছু এক মণ মজুরি দাবি করছিল। পরে প্রতিদিন আধা মণ অর্থাৎ ২০ কেজি ধান দিয়েছি। যার বাজার মূল্য প্রায় ৭৫০ টাকা। অথচ গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।”

রাজশাহী থেকে আগত শ্রমিক রহিম মিয়া বলেন, “এবার চলনবিলের ধান ভালো হয়েছে, সেই সাথে শ্রমিকের মজুরিও ভালো পাচ্ছি— এতে আমরা খুশি।”

চলনবিলের বাজারগুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিনিকেট ধান মণপ্রতি ১,৫০০-১,৫৫০ টাকা, কাটারিভোগ ১,৭০০ টাকা, ব্রি-২৮ ধান ১,৪৫০ টাকা এবং স্থানীয় গুটি ধান ১,৪০০-১,৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, বাজারে ধানের চাহিদা ভালো। কারণ দেশব্যাপী চালের বাজার চড়া। নতুন ধান উঠলেও দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলেই তারা ধারণা করছেন। চলনবিলের ধান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চালকল ও পাইকারি বাজারে সরবরাহ হচ্ছে।

তবে উৎপাদন খরচের লাগামছাড়া বৃদ্ধিতে হতাশা প্রকাশ করেছেন বড়াইগ্রামের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস। তিনি বলেন, “এক বিঘা জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, শ্রমিক, কীটনাশকসহ সব খরচ মিলে প্রায় ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা পড়েছে। ফলন ভালো হলেও ন্যায্য দাম না পেলে লাভ হবে না। খরচের তুলনায় দাম বাড়াতে হবে।”

এ বিষয়ে নাটোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, “কৃষকদের সহায়তায় আমরা নতুন জাত ও প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। খরচ কমাতে সরকার কৃষি যন্ত্রপাতি, কম্বাইন হারভেস্টার ভর্তুকিতে দিচ্ছে। শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন খরচ কমাতে কৃষকদের আরও যন্ত্রনির্ভর হতে হবে।”

চলনবিল অঞ্চলের কৃষিবিদরা মনে করেন, ধানের দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় এবারের মৌসুম কৃষকদের কিছুটা স্বস্তি দেবে। তবে শ্রমিক সংকট ও উৎপাদন ব্যয়ের চাপ দীর্ঘমেয়াদে কৃষকের মুখে হাসি ফোটাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা জরুরি।

এদিকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলনবিল এখনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে কৃষকের জীবনমান উন্নয়ন ও কৃষিকে লাভজনক করতে হলে বাজার ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা, ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা এবং কৃষি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।

আরএন
সম্পর্কিত   বিষয়:  চলনবিল  


LATEST NEWS
MOST READ
Also read
Editor : Iqbal Sobhan Chowdhury
Published by the Editor on behalf of the Observer Ltd. from Globe Printers, 24/A, New Eskaton Road, Ramna, Dhaka.
Editorial, News and Commercial Offices : Aziz Bhaban (2nd floor), 93, Motijheel C/A, Dhaka-1000.
Phone: PABX- 41053001-06; Online: 41053014; Advertisement: 41053012.
E-mail: [email protected], news©dailyobserverbd.com, advertisement©dailyobserverbd.com, For Online Edition: mailobserverbd©gmail.com
🔝
close