বাবা মোঃ লুৎফর রহমানের নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি পেয়ে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মোঃ শাহরিয়ার রাসেল বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি এই রাসেলকে নিয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর মো. শাহরিয়ার রাসেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া এবং বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং কেন তা আইনগতভাবে অকার্যকর ঘোষণা করা হবে না।’
গত ২০ এপ্রিল বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। গত ৩০ এপ্রিল বিষয়টি নিশ্চিত করেন আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ-উল-ইসলাম।
হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিবাদীদেরকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে। একইসঙ্গে ৩ ও ৪ নম্বর বিবাদীদেরকে আদেশ প্রাপ্তির তারিখ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আবেদনকারীর গত ২রা ফেব্রুয়ারি ২৫ তারিখের আবেদন (সংযুক্তি-এইচ) আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, মোঃ শাহরিয়ার রাসেল গত ১ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে ডাটাবেজ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদে যোগদান করেন। নিয়োগের জন্য আবেদন করার সময় তিনি 'মুক্তিযোদ্ধা কোটা' এবং 'বিভাগীয় প্রার্থী' হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেন, যদিও তিনি প্রকৃতপক্ষে বিভাগীয় প্রার্থী ছিলেন না ।
পরবর্তীতে, তার পিতা মোঃ লুৎফর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা গেজেট ২৪ মার্চ ২০২২ তারিখে বাতিল করা হলেও শাহরিয়ার রাসেল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে অবহিত করেননি।
আরও জানা যায়,পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২-এর ৩৬ অনুচ্ছেদের ২ ও ৩ উপধারার বিধান অনুযায়ী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বছরে একবার চাকরিবই পরিদর্শনের সুযোগ আছে এবং ত্রুটি বা অসঙ্গতি দেখা দিলে ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু মোঃ শাহরিয়ার রাসেল এ নিয়ম পালন করেননি।
উক্ত তথ্য গোপন করা দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর চ্যাপ্টার XVIII এর ধারা ৪৬৫ থেকে ৪৭১ অনুযায়ী প্রতারণামূলক অপরাধ, যা ফৌজদারি আইনে শাস্তিযোগ্য।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, শাহরিয়ার গত ২০১৯ সালের ১লা এপ্রিল পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি তার নামে ‘লজিক অ্যান্ড পিক্সেল টেকনোলজিস’ নামীয় একটি আইটি ব্যবসার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ড থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন (সংযুক্তি-০৪)। উক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ট্রেড লাইসেন্সের তথ্য তিনি চাকরিতে যোগদানের সময় গোপন করেন এবং পরবর্তীতেও তা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।
এই তথ্য গোপন করাও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক (কর্মকর্তা/কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা, ২০২২-এর ৩৮ অনুচ্ছেদের ২(৪) ধারার পরিপন্থী।
এই বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির বা ভুয়া সনদে চাকুরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া অভিযোগ উঠলেই তাকে বদলি করা, বরখাস্ত বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রদানের মতো বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাকেই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দুর্নীতির জন্য কার্যকর জবাবদিহিতা ও প্রতিরোধের সম্ভাবনার মানদণ্ডে যা একেবারেই যথেষ্ট নয়। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে ভুয়া সনদের মাধ্যমে চাকুরীতে নিয়োগ প্রাপ্ত হলে দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু দাউদ মিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। এমন অভিযোগ থাকলে আমরা খতিয়ে দেখবো ও যথাযত ব্যবস্থা নিবো।
এই বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোঃ মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি আমার দেখার বিষয় নয় আমি দেখিনা। এমডির সাথে যোগাযোগ করুন।
অভিযোগের বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালমা বানু গণমাধ্যমকে বলেন, এই বিষয়ে অভিযুক্ত শাহরিয়ার কাছে বাবার ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার বিভাগীয় কোটায় চাকুরীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০১৭ সালে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাই। পরবর্তিতে ২০১৯ সালে মেধা তালিকায় পরীক্ষা দিয়ে প্রথম হয়ে ফারমানেন্ট ভাবে নিয়োগ পাই। সরকারী চাকুরীজীবি হয়ে ট্রেড লাইসেন্স এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের আগে আমার একটি আইটি কোম্পানী ছিলো, ফারমানেন্ট নিয়োগের পর ঐ আইটি কোম্পানীটি আমি আর আপডেট করিনি। ঐভাবে আছে। আপনারা চাইলে যাচাই করতে পারেন।
এসআর