ধান কাটার প্রস্তুতির শুরুতেই বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় কৃষকরা শঙ্কিত হয়ে পড়লেও আঁধার কেটে সেই মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া অনুকূলে আসায় এখন নাটোরের সিংড়ার চলনবিলের কৃষকদের ঘরে ঘরে ধান কাটা-মাড়াই উৎসব চলছে। স্বপ্নের সোনার ফসল ঘরে তুলতে চলনবিলে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রায় লক্ষাধিক কৃষক। সেই কাজে সহযোগিতা করতে কোমড়ে কাপড় বেঁধে মাঠে নেমেছেন ঘরের বউ-ঝিয়েরাও।
একদিকে ভোর হতেই কাঁচি হাতে কৃষক বোরো ধান কাটতে মাঠে ছুটছেন। অন্যদিকে ঘরের বউ-ঝিয়েরা উঠান লেপন ও মাড়াই ধান সংরক্ষণ এবং বিক্রির জন্য প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলনবিল জুড়ে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ, ভালো দাম ও রাস্তাঘাটে তুলনামূলক চাঁদাবাজি কম থাকায় এ বছর কৃষকরাও খুশি।
মঙ্গলবার সিংড়ার চলনবিলের মাঝ দিয়ে তৈরি সিংড়া-তাড়াশ-বারুহাস ডুবন্ত সড়কের (বর্ষায় যখন পানি উঠে) ৭ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষাণরা স্বপ্নের সোনার ধান কাঁচি দিয়ে কেটে আঁটি বেঁধে মাঠে ফেলে রাখছেন। সেই ধান ঘোড়া ও মহিয়ের গাড়িতে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন গাড়িয়ালরা। আবার অনেকেই মাথায় করে ধানের বোঝা বহন করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার বিলের মাঝের ডুবন্ত সড়কের পাশে খোলা তৈরি করে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ডুবন্ত সড়কজুড়ে দুই পাশে প্রায় এমন শতাধিক খোলা (উঠান) চোখে পড়ে। মাঠে মাঠে কৃষাণ ও ধান বহনকারী গাড়িয়ালদের কণ্ঠে গাওয়া গান যেন বেশ মধুর শোনায়।
চলনবিলের ইন্দ্রাসুন গ্রামের কৃষক আব্দুল করিম জানান, কিছু কিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় প্রথমে কৃষকরা বেশ দুঃচিন্তায় পড়েছিলেন। কিন্তু সেই আঁধার কেটে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় কৃষক ধান কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে কিছুটা শ্রমিক সংকট ও ধান কাটতে খরচ বেশি গুনতে হচ্ছে।
চলনবিলের ধান বহনকারী ঘোড়ার গাড়িয়াল তোলা মোল্লা জানান, তারা পাবনা সদর এলাকা থেকে নয় ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে চলনবিলে এসেছেন। কম খরচে সেই গাড়িতে কৃষকদের ধান বহন করে দিচ্ছেন। তবে বৃষ্টির কারণে কিছু এলাকায় কাঁদা পানিতে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। সেই ধান বহনে ঘোড়াকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
ডাহিয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য রুবেল হোসাইন জানান, চলনবিলের ডুবন্ত সড়কের পাশে ধান কেটে মাড়াইয়ে কৃষকের সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। এতে কৃষক কম খরচে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছেন। সেখান থেকেই ধান কেনা বেঁচা হচ্ছে। তবে ধান মাটিতে পড়ে ফলন কিছুটা কম হলেও ভালো দামে কৃষক বেশ খুশি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার ফরিদ জানান, চলনবিলের মাঠ জুড়ে পাকা ধান কাটার উৎসব চলছে। এর মধ্যে সিংড়া উপজেলায় এ বছর ৩৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এখন পর্যন্ত প্রায় নয় হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আশা করছি আগামী ১২ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হবে। ধান কাটার প্রস্তুতির শুরুতেই ঝড়ো হাওয়ায় ধান মাটি শুয়ে পড়ায় কৃষক দুঃচিন্তায় পড়লেও ফলন ও দামে বেশ খুশি চলনবিলের কৃষকরা।