শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে সোনার ফসল রক্ষা করতে শুরু হয়েছে আধাপাকা ধান কাটা। প্রায় এক মাস ধরে উপজেলার পোড়াগাঁও, নয়াবিল ও রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকার গোপে রোপিত বোরোধান ক্ষেতে তাণ্ডব চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করছে বন্যহাতির দল।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা কালাপানি গ্রামের পাহাড়ি এলাকায় কৃষক-কৃষাণীরা দলবেঁধে তাদের আধাপাকা বোরোধান কেটে নিচ্ছেন। তারা জানান, প্রতিদিন বিকেলের দিকে ৪০-৫০টি বন্যহাতি খাবারের সন্ধানে ধানক্ষেতে নেমে আসে। তারা ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে ক্ষেত নষ্ট করছে। এতে ফসল ঘরে তোলা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তাই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার যে সব ধান পাকতে শুরু করেছে, সেগুলো আগেভাগেই কেটে নিচ্ছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, ধান রোপণের পর থেকেই তারা দিনের বেলায় টং ঘরে বসে পাহারা দেন এবং রাতের বেলায় মশাল জ্বালিয়ে ও ডাক-চিৎকার করে ফসল রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু আবাদের শেষ পর্যায়েও হাতির ভয়ে পাকা ধান ঠিকভাবে কাটতে পারছেন না।
বুরুঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল কাদির বলেন, “আমি পাহাড়ের ঢালে ৭৫ শতাংশ জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে হাতির দল পাহাড় থেকে নেমে এসে ধান নষ্ট করছে। তাই পেটের খোরাকি আর খরচের টাকা তুলতে বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধানই কেটে নিচ্ছি।”
একই এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, “সারারাত জেগে হাতি তাড়াতে হয়। এতে আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, আর দিনের বেলায় ঠিকমতো কাজ করতে পারি না।”
কৃষাণী রত্না আক্তার বলেন, “আগে হাতির দল শুধু রাতেই আসত। এখন দিনে-দুপুরেও এসে ধান খেয়ে যাচ্ছে। হাতিরা আর কোনো কিছুকেই ভয় পায় না, কোনো বাঁধাও মানে না। আমরা ছোট ছোট সন্তানদের নিয়ে রাত জেগে থাকি, ঘুমাতে পারি না।”
অন্য কৃষক আয়নাল হক বলেন, “আমার দুটি বসতঘর গুড়িয়ে দিয়েছে বন্যহাতি। এখনও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি।” কৃষাণী রাবিয়া বেগমও একই কথা জানান—তিনিও ফসলের ক্ষতিপূরণ পাননি।
ময়মনসিংহ বনবিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, “বন্যহাতির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”
নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, “নিয়ম অনুযায়ী ধান শতকরা ৮০ ভাগ পেকে গেলে কাটা হয়। তবে পাহাড়ি এলাকায় বন্যহাতির তাণ্ডবের কারণে সেখানে শতকরা ৬০ ভাগ ধান পাকলেই তা কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, যেন অন্তত কৃষকরা খোরাকির ধান ও কিছু খরচের টাকা তুলতে পারেন।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার ববি বলেন, “গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তাণ্ডব দীর্ঘদিনের সমস্যা। এটি সমাধানে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বনবিভাগের মাধ্যমে সরকারিভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হচ্ছে।”
এমএস/আরএন