সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার একটি গ্রামে মাত্র ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠেছে এক হতভাগী মায়ের বিরুদ্ধে।
জানা যায়, উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের শামীম হোসেনের স্ত্রী আশামনি খাতুন (২৫) তাদের ১৪ দিনের নবজাতক কন্যাশিশু খাদিজা খাতুনকে বিক্রি করে দিয়েছেন। সূত্র জানায়, শিশুটির সঠিক চিকিৎসা ও দুধ কেনার সামর্থ্য না থাকায় এই কঠিন সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বিষয়টি গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাতে জানাজানি হয়।
এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর কর্মকারপাড়ায় একাধিক বিয়ের জন্য পরিচিত শামীম হোসেন (২৮) তার ৫ম স্ত্রী হোসনে আরা খাতুনকে নিয়ে আফসার আলীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। পেশায় তিনি একজন ডিপ টিউবওয়েল মিস্ত্রী, মাঝে মাঝে ইটভাটায়ও কাজ করেন।
স্বামীর পঞ্চম বিয়ের খবর শুনে আশামনি ভোরে সেখানে ছুটে যান এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও হোসনে আরা সুকৌশলে পালিয়ে যান।
আশামনি জানান, চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি কুল্যার মোড়ের এক ক্লিনিকে তিনি তাদের দ্বিতীয় সন্তান প্রসব করেন। ক্লিনিকের খরচ, শিশুর ওষুধ ও দুধের জন্য আর্থিক সংকটে পড়ে তিনি ১৪ দিনের মাথায় তেঁতুলিয়া গ্রামের নিঃসন্তান চা বিক্রেতা রবিউল ও তার স্ত্রী কাজলের কাছে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে শিশুকে বিক্রি করেন। তিনি আরও জানান, এই সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছেন সন্তানের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার আশায়।
আশামনির বাবা, ভ্যানচালক আব্দুস সামাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
চা বিক্রেতা রবিউলের মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী কাজল বলেন, "আমরা স্বাক্ষীদের সামনে নির্দিষ্ট শর্তে ও দরদাম করেই শিশুটিকে গ্রহণ করেছি। টিকা কার্ডে পিতা-মাতার স্থানে আমাদের নাম লেখা হয়েছে এবং জন্ম নিবন্ধন সনদে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে ফারিয়া জান্নাতুল। সে আমাদের সন্তান হিসেবেই পরিচিত হবে।"
অন্যদিকে, শামীম জানান, তিনি নির্দোষ এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে আশাশুনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তবে পরবর্তীতে আর কোন খোঁজ খবর নেননি।
আশাশুনি থানার ওসি সামছুল আরেফিন জানান, "আমি মাত্র চারদিন আগে এখানে যোগদান করেছি, এ বিষয়ে কিছু জানি না। তদন্ত কর্মকর্তার সাথেও কথা বলেছি, তিনিও কিছু জানেন না।"
স্থানীয়রা জানান, শামীম যেখানে যায়, সেখানেই বিয়ে করে। ২০১৬ সালে তালা উপজেলার লাউতাড়া গ্রামে প্রথম বিয়ে করলেও তা স্থায়ী হয়নি। এরপর বদরতলায় টিউবওয়েল স্থাপনের কাজে গিয়ে বাড়ির মালিকের স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে, সেটিও টিকেনি। পরে নিজের চাচাতো বোন বিলকিস খাতুনকে বিয়ে করলেও আশামনিকে বিয়ে করার পর বিলকিস ডিভোর্স দিয়ে চলে যান।
আশামনি অভিযোগ করেন, সন্তান গর্ভে থাকাকালীনও শামীম বদরতলায় কাজ করতে গিয়ে ছয় মাস আগে হোসনে আরাকে আবারও বিয়ে করে। এভাবেই তার স্বামী বারবার বিয়ে করে সংসার ভেঙে চলেছেন।
এমজেড/আরএন