কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে বিএডিসির উৎপাদিত আলু বীজ হিমাগারে সংরক্ষণের সুযোগ না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচে শেড তৈরি করে সেখানে সংরক্ষণ করছেন বীজ আলু। এতে কিছুদিনের মধ্যেই আলুতে পচন ধরার শঙ্কা রয়েছে। অনেক কৃষকের ঘরে এখন এসব আলু খাওয়ার আলু হিসেবে বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে আছে।
চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও বাম্পার ফলন হওয়ায় দাম কমে যাওয়ায় কৃষকদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ আলুর দাম ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, কিন্তু এখন তা কমে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকায় নেমে এসেছে।
এই অঞ্চলে সাধারণত উচ্চ ফলনশীল ডায়মন্ড ও এস্টারিক জাতের আলু চাষ করা হয়, যা হিমাগারে সময়মতো সংরক্ষণ না করলে দ্রুত পচে যায়। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আলু উত্তোলন করা হলেও এখনো অধিকাংশ আলু বিক্রি হয়নি।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) আলু বীজ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর হোসেনপুর উপজেলার ২৪৮টি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে আড়াইবাড়ীয়া ইউনিয়নের চর জামাইল ব্লকে শতাধিক কৃষক ৭০ একর জমিতে আলু চাষ করেছেন।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর উপজেলায় ১,০১২ একর জমিতে প্রায় ১০,২৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে চর জামাইল এলাকায় গিয়ে কথা হয় স্থানীয় কৃষক মজিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, ২৪ একর জমিতে আলু চাষ করে ২৬ লাখ টাকা খরচ করেছেন। এর মধ্যে বিএডিসি থেকে ১৩ লাখ টাকার ঋণ নিয়েছেন, বাকি টাকা নিজে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি জানান, আলুর গুণগত মান ভালো হলেও হিমাগারে স্থান না পাওয়ায় ১৫০ বস্তা আলু ১৪ হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর কোল্ডস্টোরেজে পাঠানো হয়, কিন্তু সেখান থেকেও স্থান না পেয়ে আলুগুলো ফেরত আসতে হয়।
মজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, বিএডিসির আওতায় আলু চাষ করলেও, হিমাগারে কৃষকের আলু সংরক্ষণ না করে কিছু মধ্যস্বত্বভোগী ও পাইকারদের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা অগ্রিম নিয়ে আগেই জায়গা বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগেও পাকুন্দিয়ার এগারসিন্দুর কোল্ডস্টোরেজে অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে, এমনকি জাতীয় পত্রিকাতেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলা—মুন্সিগঞ্জ, রংপুর, বগুড়া থেকে আসা পাইকাররা এ অঞ্চলের হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন। ফলে স্থানীয় কৃষকদের জন্য হিমাগারে আর জায়গা থাকে না। বাধ্য হয়ে কৃষকরা ঘরের আঙিনায় টিনের ছাউনি ও ত্রিপল দিয়ে শেড বানিয়ে আলু সংরক্ষণ করছেন।
চর জামাইল এলাকার কৃষক ফখরুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, আবুল হাসেন, আনারুল ইসলাম, আবুল বাশার, মো. রাজিব মিয়া, কামাল মিয়া, আব্দুল হামিদ, মশিউর রহমান, মো. মজিবুর রহমান ও সৃজন মিয়াসহ শতাধিক কৃষকের উৎপাদিত কয়েকশ মণ আলু এখন খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে।
কৃষকদের অভিযোগ, জেলার প্রায় অর্ধেক আলু ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকায় উৎপাদিত হলেও হোসেনপুরে সরকারি কোনো হিমাগার না থাকায় প্রতিবছরই ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তারা সরকারের কাছে হোসেনপুরে একটি সরকারি হিমাগার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
হোসেনপুর কৃষি অফিসের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, সরকারি হিমাগারে স্থান না পাওয়ায় কৃষকদের আলু কিছুদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ একেএম শাহজাহান কবির বলেন, এ এলাকার জন্য অন্তত ৫ হাজার মেট্রিক টন ধারণক্ষমতার একটি হিমাগার প্রয়োজন।
অন্যদিকে, পাকুন্দিয়া হিমাগারের উপপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীদের আলু সংরক্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, “আমরা সব সময় আমাদের তালিকাভুক্ত কৃষকদের কাছ থেকেই আলু গ্রহণ করে থাকি।”
এসএ/আরএন