ঈদ উল ফিতরের টানা ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের বরণে প্রস্তুত চায়ের দেশখ্যাত শ্রীমঙ্গল। আগত পর্যটকদের জন্য এবার পাঁচতারকা হোটেল, মোটেল ও গেস্ট হাউসগুলোতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে একাধিক হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজগুলো শতভাগ বুকিং হয়ে গেছে। তবে কিছু হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বুকিং সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, পর্যটকদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও নানা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ঈদের টানা ৯ দিনের ছুটি থাকায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন স্থানীয় পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। জেলার শ্রীমঙ্গলে গড়ে উঠা অসংখ্য রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল, গেস্ট হাউসে রাত্রিযাপন করতে সহস্রাধিক পর্যটক আসেন। তাছাড়া জেলার পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের ১৫ থেকে ২০টি দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্রও প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের বরণে। এ উপজেলায় পাঁচতারকা মানের রিসোর্টসহ শতাধিক রিসোর্ট, কটেজ, হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন নামি-দামি চাইনিজ ও থাই খাবারের রেস্টুরেন্টগুলো আলোর সাজসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে। পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে খাবারে নতুনত্ব আনা হয়েছে। বাংলা-চাইনিজ, থাইয়ের পাশাপাশি আদিবাসী খাবারও মেন্যুতে রাখা হয়েছে। তাছাড়া, ঘুরতে আসা পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দিতে নতুন করে সাজানো হয়েছে রেস্টুরেন্টগুলো।
মৌলভীবাজার জেলায় হাওড়, পাহাড় এবং টিলাবেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমিতে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শতাধিক পর্যটন স্পট। জেলার সবচেয়ে বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে চায়ের দেশ নামে খ্যাত শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ উপজেলায়। সবুজের সমারোহে গালিচা বিছানো উচুঁ-নিচু নান্দনিক চা বাগানে ঘেরা শহর শ্রীমঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য ভ্রমণ পিপাসু দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে। প্রতিবছর বিশেষ দিনগুলি ঈদ কিংবা সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের পদচারণা বাড়িয়ে তোলে।
শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, হাইল হাওর, বাইক্কা বিল, চা কন্যার ভাস্কর্য, রমেশ রাম গৌড়ের আবিষ্কৃত সাত রঙের চা, বধ্যভূমি ৭১, বাংলাদেশ চা গবেষণা কেন্দ্র, রাবার বাগান, গোল টিলা, হজম টিলা, সীতেশ বাবুর বন্যপ্রাণী সেবাকেন্দ্র, খাসিয়া পুঞ্জি, মনিপুরী সম্প্রদায়ের তাঁতশিল্প, গারোপল্লী, ভাড়াউড়া লেক, শংকর টিলাসহ শ্রীমঙ্গলের অসংখ্য পর্যটন স্পটগুলো ঘুরে দেখতে ঈদের ছুটিতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা চায়ের দেশে আসেন। এছাড়াও, জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট ও কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সীমান্তবর্তী ধলই চা বাগান, বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ এবং মাধবপুর লেকও ঈদের ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে।
চামুং রেস্টুরেন্ট এন্ড ইকো ক্যাফের স্বত্বাধিকারী তাপস দাশ ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষ্যে মানসম্মত খাবার ও স্থানীয় আদিবাসীদের সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে কিছু আদিবাসী খাবারের বিশেষ মেন্যু রয়েছে, যা আমরা সংযোজন করেছি। অতিথিদের কথা চিন্তা করে আমরা রেস্টুরেন্ট নতুনভাবে সাজিয়েছি। আমরা আশা করছি, যেহেতু এবার সাজেক, সেন্টমার্টিন এবং ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রয়েছে, সেজন্য শ্রীমঙ্গলে উল্লেখযোগ্য হারে পর্যটক সমাগম ঘটবে এবং ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে।”
বালিশিরা রিসোর্টের পরিচালক (পরিচালনা ও প্রশাসন) জাহানারা আক্তার ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদ উপলক্ষ্যে পর্যটকদের জন্য আমরা নতুন প্যাকেজ অফার করেছি। যাতে তারা একসাথে ভ্রমণ এবং তাদের থাকার জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন। এবারই প্রথম পর্যটকদের জন্য কমন সুইমিং পুলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতদিন বালিশিরার চারটি রুমে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সুইমিংপুল ছিল, তবে এখন আমাদের কমন সুইমিং পুলও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ঈদের জন্য আমাদের অলরেডি ঈদের দিন, ঈদের পরের দিন এবং পরবর্তী ১২ দিনে শতভাগ বুকিং সম্পন্ন হয়ে গেছে। আশা করছি, গত ২৬ তারিখ থেকে আগামী ৫ তারিখ পর্যন্ত ভালো ব্যবসার সম্ভাবনা রয়েছে।”
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জিএম আরমান খান ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদের টানা ছুটি উপলক্ষ্যে আগামী এক তারিখ থেকে পাঁচ তারিখ পর্যন্ত বুকিং ভালো রয়েছে। গতবছরের ঈদের তুলনায় এবছর একই রকম অবস্থান রয়েছে।”
ট্যুরিস্ট পুলিশ শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ জোনের ওসি মো. কামরুল হোসেন চৌধুরী ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদে পর্যটকদের নিরাপত্তায় জেলা পুলিশের সমন্বয়ে উপজেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সবাই টহলে থাকবে। বিশেষ করে পর্যটন স্পটের সীমান্তগুলোতে বিজিবি টহলে থাকবে। আমরা ইতিমধ্যে পরিবহণ সংশ্লিষ্টদের সাথে মিটিং করেছি। তারা যাতে পর্যটকদের সাথে খারাপ ব্যবহার বা কোনো ধরনের বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় আমাদের টহল টিম সার্বক্ষণিক সক্রিয় থাকবে।”
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন ডেইলি অবজারভারকে বলেন, “ঈদে পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য আমাদের এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে থাকবে, এবং যৌথ বাহিনী যেমন পুলিশ, সেনাবাহিনীর পেট্রোলিং ডিউটি, র্যাব এবং পাশাপাশি ব্যাটালিয়ন আনসার মাঠে সক্রিয় থাকবে। বিশেষ করে ঈদে যাতে আমাদের পর্যটক থেকে শুরু করে মৌলভীবাজার বাসী, যাঁরা বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে যাবেন, তাঁদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।”