যেখানে রাবার ড্যাম হওয়ার কথা ছিল কৃষকের আশীর্বাদ, মেরামতের অভাবে তা হয়ে উঠেছে অভিশাপ। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুরের যোগেন্দ্রনগর-দুর্গাপুর রাবার ড্যামটি চলনবিলের ইরিগেশন উন্নয়নের জন্য ১৯৯৮-৯৯ অর্থবছরে প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।
নির্মাণের দীর্ঘ ২৫ বছর অতিবাহিত হলেও সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে খুঁড়িয়ে চলছে এটি। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে ধুঁকছে ফসলের মাঠ, সেই সাথে শুকিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। বোরো ধানের জমিতে পানি দিতে গিয়ে বিপদে চলনবিলের হাজারো কৃষক। সংস্কারের আশায় বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার যোগেন্দ্রনগর-দুর্গাপুর রাবার ড্যামের বেহাল অবস্থা। উজানের সংরক্ষিত পানি পুরানো রাবারের ফুটো দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে ভাটির দিকে। ফলে প্রয়োজনীয় পানির অভাবে চলনবিল এলাকার কৃষকরা সেচের পানির তীব্র সংকটে ভুগছেন। ড্যামের রাবারের বিভিন্ন স্থানে ছিদ্র ও মাঝে মধ্যেই পাম্প মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ায় জোড়াতালি দিয়ে চলছে সেচ কার্যক্রম। ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন।কৃষকরা বিকল্প পথে সেচের ব্যবস্থা করছেন। তাতে বাড়ছে জ্বালানি খরচসহ অন্যান্য খরচও।
এলাকার কৃষকদের দাবি, রাবার ড্যামের ভাটিতে ছোট আরেকটা ড্যাম নির্মাণসহ দ্রুত রাবার ড্যামটি সংস্কার করলে একদিকে আমাদের জ্বালানি খরচ বেচে যাবে অন্যদিকে ফসল উৎপাদনও হবে দ্বিগুন। অন্যথায় আমাদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হবে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্র বলছে, বাংলাদেশের বৃহত্তম জলাভূমি যা নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত। এর মোট আয়তন প্রায় এক হাজার ১৫০ বর্গকিলোমিটার। গুরুদাসপুর উপজেলা এই বিলের অন্তর্ভুক্ত, যেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে। রাবার ড্যামের অকার্যকারিতার ফলে চলনবিলের প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর জমি সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিলহরিবাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, 'ড্যামটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আমরা ঠিক মতো সেচের পানি পাচ্ছি না। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। দ্রুত ড্যামটি মেরামত করা না হলে আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পরবো।'
বিলশা গ্রামের কৃষক গোলাম সরদার বলেন, 'আমি এ বছর প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করেছি। যা ওই রাবার ড্যামটির উপর নির্ভরশীল। ড্যামটি ভালো ভাবে কাজ না করায় আমাদের সেচের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, যার কারণে খরচ বেশি হচ্ছে এবং ফসলের উৎপাদন কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।'
কৃষিবিদ ড. সাইফুল ইসলাম বলেন, 'রাবার ড্যামটি সঠিক ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সেচের পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এটি চলনবিলের কৃষকদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। ড্যামটি দ্রুত মেরামত করা না হলে ফসল উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাবে, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।'
গুরুদাসপুর কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, 'প্রায় ১০ বছর যাবৎ ড্যামটি সংস্কারের অভাবে খুঁড়িয়ে চলছে। নদীর দুই ধারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ড্যামটি মেরামতসহ সেচের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করলে কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব হবে এবং চলনবিলের কৃষি উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে। দুই পারের মানুষও ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।'
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, 'যোগেন্দ্রনগর-দুর্গাপুর রাবার ড্যামের দ্রুত মেরামত ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শুধু কৃষকদের সেচের পানির চাহিদা পূরণ করবে না বরং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে। পাশাপাশি কৃষকদের দুর্ভোগ লাঘব হয়ে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। সঠিক সময়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এ অঞ্চলের কৃষি ও সামগ্রিক উন্নয়ন আরও গতিশীল হবে।'
এমএ