কয়েক বছর ধরেই সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ফলের দাম। গেল এক বছরে আপেল-আঙুরের মতো ফলে তিন দফায় বাড়ানো হয়েছে আমদানি শুল্ক। এতে সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে ফলের দাম। এতে পরিবারের জন্য যারা ফল কিনতেন, তারা তালিকা থেকে পুষ্টিকর এ পণ্যটি বাদ দিচ্ছেন। খুব প্রয়োজন হলে পারিবারিক খরচ সমন্বয় করে অল্প করে ফল কিনছেন। ফলে রাজশাহীর বাজারগুলোতে কমেছে বেচা-বিক্রি।
এমন পরিস্থিতিতে রোজা শুরুর একদিন বাকি থাকতেই ফলের বাজারে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। রোজার আগে বাজারের এমন পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলো।
এদিকে, রমজান মাসে ফলের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। রমজানে ফলের দাম ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় রাখতে আপেল, কমলা, আঙুর, বেদানা, নাশপাতিসহ তাজা ফলে আরোপিত শুল্ক-কর কমানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটি মনে করছে, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও শুল্ক-কর বাড়ানোর কারণে আমদানি করা তাজা ফলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা ভোক্তার ওপর অসহনীয় চাপ সৃষ্টি করেছে।
সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, আপেল, কমলা, মালটা ও আঙুরের মতো ফল কিনতে গেলে আগের চেয়ে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। ফলে মাসের খরচ মেলাতে গিয়ে প্রয়োজনমত ফল কিনতে পারছেন না তারা।
শুক্রবার বেলা ১১টায় মহানগরীর সাহেববাজার এলাকায় ফল কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী সুমন আহমেদ। তিনি বলেন, বাড়িতে অসুস্থ্য মা ও দুটি ছেলে আছে তাদের জন্য ফল কিনছি। তবে আগে যে পরিমাণে ফল কিনতে পারতাম এখন সেটা পারি না। এখন যে অবস্থা হচ্ছে, সামনে হয়তো আর এসব ফল খেতে পারব না। ১০ দিন আগে মাঝারি আকারের কমলার কিনেছি প্রতি কেজি ২৬০ টাকা করে, যা এখন ২৯০ টাকা। ২৯০ টাকা কেজির আপেলের দামও বেড়ে হয়েছে ৩২০ টাকা।
মহানগরীর সাহেববাজার, লক্ষীপুর, রেলগেট ও বিনোদপুর, কাজলা ও মেডিকেলের সামনের খুচরা ফল বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিকেজি আপেল বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়। প্রতিকেজি কমলা এখন ২৮০-৩০০ টাকা। যা গতবছরের শেষেও দাম ছিল ২৫০ টাকা কেজি। চায়না কমলার কেজি এখন ৩২০ টাকা। মাল্টা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা। অথচ সপ্তাহ খানেক আগে বিক্রি হয়েছে ২৫০-২৬০ টাকা। সবুজ আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৪৬০ টাকা কেজি। প্রতিকেজি লাল আঙুর বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি।
লক্ষীপুর এলাকায় নাজমুল হোসেন নামের এক ক্রেতা বলেন, অতিরিক্ত দামের কারণে অনেক আগ থেকেই পরিবারের জন্য ফল কেনা বাদ দিয়েছি। হাসপাতালে একজন রোগী দেখতে যাব, তাই ফল কিনতে এসেছি। কিন্তু ফলের দাম তা শুনে কী রেখে কী কিনব বুঝতে পারছি না।
শামিম হাসান নামের আরেকজন বলেন, আমি পরিবারের জন্য মাঝে মাঝে ফল কিনি। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ফলের দাম বেশি বেড়েছে। তারপর রমজান মাস। এমাসে ইফতারের জন্য বেশিরভাগ পরিবার ফল কেনে। তবে রমজান শুরুর আগেই ফলের যে দাম তাতে ইফতারের আইটেম থেকে ফল বাদ দিতে হবে।
রাজশাহীর পাইকারি ফল বিক্রেতা আমির হোসেন বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির কারণে আমদানি প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সম্প্রতি সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে পাইকারি বিক্রি আরো ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ফলে ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেড়েছে। কিছু ফলের দাম কেজিতে ৫০ টাকারও বেশি বেড়েছে। কালো আঙুর পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ৫০০ টাকায় কিনতাম, এখন কিনি ৫৩০ টাকায়। ছোট ডালিম ৪৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৮০ টাকা হয়েছে। ২৭০-২৮০ টাকার নাশপাতি পাইকারি বাজারে ২৮৮ টাকা হয়ে গেছে। পাইকারি বাজারের ওইদিকে দাম বাড়লে আমাদেরও দাম বেশি রাখতে হয়। এখন মানুষ ফল অনেক কম কিনছেন। সরকার যদি ট্যাক্সটা কমায় তাহলে ফল বিক্রি করে চলতে পারব।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য নাজিম উদ্দীন বলেন, বিলাসী পণ্য হিসেবে আমদানিকৃত ফলের ওপর এক বছরে তিন দফায় ৬০ থেকে ৭০ টাকা সম্পূরক শুল্ককর বাড়িয়েছে এনবিআর। আপেল, আঙুর, কমলা হচ্ছে শিশুখাদ্য ও রোগীর পথ্য। এটা কীভাবে বিলাসী পণ্য হয়, সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
আরএইচএফ/এসআর