বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-দুবাই রুটের নির্ধারিত ফ্লাইট বিজি ৩৪৭ ঢাকা থেকে গত ১৯ ফেব্রুয়ারী (বুধবার) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে ৩৯৬ জন যাত্রী এবং ২২ টন কার্গো নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ওই বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে দু'জন বৈমানিক, ১০ জন কেবিন ক্রু এবং ৩৯৬ জন যাত্রী ছিলেন।
যাত্রাপথে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের নাগপুর শহর অতিক্রান্ত হওয়ার সময় ক্যাপ্টেন পিছনের কার্গো কোম্পার্টমেন্ট থেকে ককপিটে ফায়ার সতর্কীকরণ সংকেত পান। সে সময় যাত্রীদের নৈশভোজ পরিবেশন করা হচ্ছিল।
ওই ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড ICAO/BOEING/CAAB নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং উড়োজাহাজ পরিচালনার দিক নির্দেশানুযায়ী নিকটবর্তী ভারতের নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আমবেদকা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন। এরপরই সকল যাত্রীকে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাগপুরে অবতরণের সিদ্ধান্তটি ইন-ফ্লাইট এনাউন্সের মাধ্যমে অবহিত করেন। ফ্লাইটটি নাগপুরে অবতরণের পর সকল যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে নেয়া হয়। ৩৯৬ জন যাত্রী এবং ১২ ক্রুসহ সর্বমোট ৪০৮ জনকে বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বাসে করে উড়োজাহাজটি থেকে আনুমানিক অর্ধ কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ১ ঘন্টা ২০ মিনিটের বেশী সময় ওই ৪০৮ জনকে বিমানবন্দর টার্মিনালে নিয়ে যাবার অনুমতি প্রদান করেননি। এ সময় পানি এবং টয়লেট সুবিধার জন্য যাত্রীরা বার বার অনুরোধ করা সত্যেও ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা অনুমতির আনুষ্ঠানিকতার প্রসঙ্গ তুলে তা প্রদান করা থেকে বিরত থাকেন। এতে করে বিশেষ ভাবে বৃদ্ধ এবং নারী যাত্রীরা সবচাইতে বেশী দুর্ভোগে পতিত হন। পরবর্তীতে বুধবার দিবাগত রাত ১টায় টার্মিনালে যাত্রীদের লাউঞ্জে নেবার অনুমতি দেন।
ইতিমধ্যে ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে যাত্রীদের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয় এবং সেই সাথে আশ্বস্ত করা হয় যে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের সুবিধার্থে সকল বিষয়ের যাবতীয় খরচাদি বহন করবে। নাগপুর কর্তৃপক্ষ অবহিত করেন, এই বিপুল সংখ্যক খাবার প্রস্তুতের জন্য তাদের ৩-৪ ঘন্টা সময় প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, বোয়িং ৭৭৭ এর মতো এত বৃহদাকার যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওই বিমানবন্দরে নিয়মিত চলাচল করে না। বিমানের যাত্রীদের হোটেলে পাঠানের জন্য অনুরোধ করা হলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অস্থায়ী ল্যান্ডিং পারমিট প্রদানে অপরাগতা প্রকাশ করে। এ কারণে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের টার্মিনালেই থাকতে হয়।
যাত্রীদের দেখাশোনা করার জন্য বিমানের দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজারকে বলা হলে তিনি সেখানে ইনডিগো এয়ার-এ করে বুধবার রাত ৯টা ১৫টায় নাগপুরে পৌঁছান। বৃহস্পতিবার অনুমানিক ভোর ৩টার দিকে যাত্রীদেরকে পানি সরবরাহ করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে পানি ও চা দেওয়া হয় এবং সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে নাস্তা পরিবেশন করা হয়। নাগপুর ক্যাটারিং-এর সীমিত সক্ষমতা থাকার কারণে নাস্তা দিতে সময় বেশি লেগেছে।
বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম উড়োজাহাজের সকল কার্গো ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহৃত হওয়ায় ওই উড়োজাহাজ দ্বারা যাত্রীদের দুবাইতে পরিবহন সম্ভব নয়- মর্মে মতামত প্রদান করেন। সেই মোতাবেক বিমান ঢাকা অপারেশন্স কন্ট্রোল উদ্ধারকারী ফ্লাইটের পরিকল্পনা হাতে নেয় যা ঢাকা থেকে বিজি১২৬ (দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা) বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে নামার পর সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রার পরিকল্পনা করা হয়। ভারতের প্রয়োজনীয় অনুমতিপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা বেজে ৪৯ মিনিটে নাগপুরে অবতরণ করে।
নাগপুর বিমানবন্দর রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য দুপুর ১ টা ৩০ মিনিট থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অবগত হয়ে নাগপুরে অবতরণের পর পরই ওই যাত্রীদের উদ্ধারের ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বিমানে আসন গ্রহণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজ বহনকারী কন্টেনারসমূহ উদ্ধারকারী ফ্লাইটে লোড করার নির্দেশনা দেন।
যাত্রীরা উড়োজাহাজে আসন গ্রহণ করলেও নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হওয়ায় বৃহদাকার উড়োজাহাজের ব্যাগেজ কন্টেনার লোড করার জন্য শুধুমাত্র একটি যন্ত্র এবং অপর্যাপ্ত কন্টেনার ট্রলীর কারণে কল্পনাতীত সময়ক্ষেপণের পর কন্টেনার লোডিং সমাপ্ত হয়। এরই মধ্যে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় CAAB কর্তৃক অনুরোধের প্রেক্ষিতে বিকেল ৫টা ৪২ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি নাগপুর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং নিরাপদে দুবাইতে অবতরণ করে।
নাগপুর বিমানবন্দরে অপেক্ষাকালীন সময়ে যাত্রীদের দুপুরের খাবার উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে পরিবেশন করা হয়। উড্ডয়নের পর যাত্রীদের জন্য রাতের খাবারও পরিবেশিত হয়।
ভারতের স্থানীয় বিধিনিষেধ এবং নাগপুর বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে উপরোল্লিখিত উদ্ভুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে ছিল। নিয়ন্ত্রণ বর্হিভূত পরিস্থিতির কারণে যাত্রীদের সাথে সংঘঠিত হওয়া অসুবিধাসমূহের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গভীর ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রতিবাদ
এয়ারক্রাফটের ভেতরে ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ থাকার পরও নাগপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বর্তমান সরকার এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বিব্রত করার জন্য একজন নারী ও পুরুষ যাত্রী ফ্লাইটের ভেতরে যাত্রীদের প্রতি উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করে এবং ভিডিও ধারণ করে স্যোশাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করে। তারা ফ্লাইটে ক্রমাগত উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করলেও অন্যান্য যাত্রীরা তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি এবং ধৈর্য্য নিয়ে ফ্লাইটে অবস্থান করে কর্মরত ক্রুদের সহযোগিতা করেন। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের ধৈর্য্য ধারণ এবং ফ্লাইটে ক্রুদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং সাথে সাথে উল্লেখিত প্রোপাগান্ডার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
এমএ