কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে আটক এক বাংলাদেশি যুবকসহ ভারতীয় নবদম্পতিকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত। সোমবার বেলা ১২টার দিকে আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
আটককৃতরা হলেন- ভারতের পূর্ব বর্ধমান জেলার নাদনঘাট থানার ধামাই গ্রামের বাবর আলী মন্ডলের মেয়ে এক সন্তানের জননী রেশমা মন্ডল (২৮), দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উশতি থানার গড়খালী গ্রামের দেবকুমার সাপুইয়ের ছেলে ও স্বামী সৌরভ কুমার সাপুই (১৮) ও সহযোগী কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কাশিরডারা গ্রামের বাচ্চু মিয়ার ছেলে ইউসুফ আলী (২২)।
বিজিবি ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় নবদম্পতি ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে ভারত থেকে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন তাদের পূরণ করতে দেয়নি বিজিবি সদস্যরা।
লালমনিরহাট-১৫ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধীন বালারহাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা রোববার বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের বালাতাড়ী সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার নং ৯৩৩ এর সাব পিলার ১০ এর এস থেকে ৪০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গজেরকুটি গ্রামে বাংলাদেশি সহযোগী যুবকসহ ভারতীয় দুই নাগরিককে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে তাদের বিরুদ্ধে পাসপোর্ট আইনে মামলা দায়ের করে ফুলবাড়ী থানায় সোপর্দ করে বিজিবি।
আটক ভারতীয় নবদম্পতি জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে আমাদের ফেসবুক মাধ্যমে পরিচয় হয়। এরপর দু'জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আমরা দু'জন দু'জনকে খুব ভালোবাসি। তিন মাস আগে ভারতে বিবাহ করি। দুই পরিবার আমাদের মেনে নেবে না বলেই আমরা অনেক আশা করে বাংলাদেশে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে এসেছি। কিন্তু ভাবিনি সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হবো। আমাদের ছেড়ে দেয়ার জন্য অনেক অনুরোধ করছি। কিন্তু বিজিবি সেই অনুরোধ রাখেনি।
বাংলাদেশি যুবকের বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভারতীয় নাগরিক সৌরভ জানান, সে আমার ফেসবুক বন্ধু। আগেই তার সাথে আমার পরিচয়। তাকে শুধু বলেছি আমাদের একটু সহযোগীতা করার জন্য।
ভারতীয় গৃহবধূ রেশমা মন্ডল জানান, আমি ভারতে সরকারি গার্মেন্টস স্কুলে শিক্ষকতা করি। আমি আগের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে সৌরভ কুমারকে বিয়ে করেছি। আমার একটা ৫ বছরের ছেলে সন্তান রয়েছে। আমার দ্বিতীয় স্বামী অন্য ধর্মের হওয়ায় পরিবার বিষয়টি মেনে নেবে না বলে ঘর সংসার করার জন্য দালালের মাধ্যমে দুই দফায় ৩২ হাজার টাকার বিনিময়ে কাঁটাতারের বেড়া পাড় করেছি। পাড় হওয়ার সময় পড়নের কাপড় ছিঁড়ে যায়। খুবই কষ্ট করে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে এসেছি। দুর্ভাগ্য কপাল বিজিবির হাতে আটক হই। জানি না এখন কবে নিজ দেশে যেতে পারবো।
লালমনিরহাট ১৫ বিজিবি ব্যাটলিয়নের অধীন বালারহাট ক্যাম্পের টহল কমান্ডার হুমায়ূন কবির জানান, রাতেই বিজিবি বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মাদক দায়ের করে থানায় সোর্পদ করা হয়েছে। অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে ২৪ ঘন্টা বিজিবি'র টহল অব্যাহত রয়েছে।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মামুনুর রশীদ জানান, আটক বাংলাদেশি যুবকসহ ভারতীয় নবদম্পতির বিরুদ্ধে বিজিবি বাদি হয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে মামলা দায়ের করেছে। সোমবার দুপুরে কুড়িগ্রাম আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।