কুমিল্লার হোমনা উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদীর দুই পাশে কয়েকশ' অবৈধ বাঁশের ঘের দেওয়া হয়েছে। এসব ঘের থেকে নির্বিচারে রেণুসহ বিভিন্ন মাছ শিকার করা হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে নদীর স্বাভাবিক স্রোতোধারা। এ কারণে নদীটি কোথাও কোথাও মরা খালে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘদিন নির্বিচারে মাছ শিকার করা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, তিতাস নদীর প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকায় শতাধিক অবৈধ ঘের রয়েছে। উপজেলার শ্রীমদ্দি থেকে রামচন্দ্রপুর পর্যন্ত প্রভাবশালীরা তিতাস নদীতে গণহারে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করছেন। মাছ শিকারে ব্যবহার করা হচ্ছে চিকন ফাঁসের জাল। এসব জাল থেকে কোনো (আধা সেন্টিমিটারের কম) ধরনের মাছই বের হতে পারে না। ফলে ছোট-বড় মাছের পাশাপাশি পোনাও ধরা পড়ছে ঘের মালিকদের ফাঁদে।
শ্রীমদ্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল বাতেন বলেন, ‘আমাদের তিতাস নদীতে আগে বড় বড় লঞ্চ, মালবাহী স্টিমার চলত। এখন তো ঘের, কচুরিপানা ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে নৌকা চলাচল কষ্টকর হয়ে ওঠে। সময়ের ব্যবধানে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই মরা খালে পরিণত হচ্ছে তিতাস।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘নদীর এই নাব্যতা হারানোর নেপথ্যে রয়েছে নদী দখল, পলি জমে ভরাট হওয়া, অবৈধ ভাবে ঘের দিয়ে মাছ শিকার করা।’
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আবদুল মোমেন বলেন, ‘তিতাস নদ ছিল আমাদের গর্ব। অবৈধ মাছের ঘেরের কারণে নদের স্বাভাবিক স্রোতোধারা ব্যাহত হচ্ছে, পলি মাটি জমে এটি ভরাট হচ্ছে। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এখানে এভাবে মাছ ধরা হচ্ছে।’
শ্রীমদ্দি গ্রামের মো. দুলাল মিয়ার ঘের আছে তিতাসে। তিনি বলেন, ‘সরকারি নদীতে ঘের তৈরি করে মাছ ধরা অবৈধ, এটা আমার জানা নেই।’
হোমনা গ্রামের ঘের মালিক কিংকড় দাস বলেন, ‘আমরা যুগ যুগ ধরে নদীতে ঘের তৈরি করে মাছ ধরতেছি। কোনো দিন তো কেউ কিছু বলে নাই। আর সরকারি নদীতে ঘের দেওয়া অবৈধ হবে কেন?’
উপজেলার শ্রীমদ্দি থেকে রামচন্দ্রপুর পর্যন্ত পুরো এলাকায় তিতাস দখল হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি দখল হয়েছে রামকৃষ্ণপুর। নদ দখল করে তৈরি করা হয়েছে কৃষি ক্ষেত। ধানসহ বিভিন্ন ধরনের চাষাবাদ হচ্ছে এই এলাকায়। এতে নদের প্রবাহ একেবারে শীর্ণ হয়ে এসেছে। এছাড়া নদে অবৈধ ঘের তৈরির কারণে কচুরিপানা আটকে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুই পারের মানুষ রান্নাবান্নাসহ গৃহস্থালির কাজের জন্য নদীর পানি ব্যবহার করত। তবে ঘেরের কচুরিপানা পঁচে পানি দুর্গন্ধময় হয়ে পড়ায় তিতাস পারের মানুষ গোসল, রান্নাবান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ করতে পারছে না।
এমন অবৈধ ঘের থাকার কথা স্বীকার করলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এসব অবৈধ মাছের ঘের আমিও দেখেছি। ইউএনও স্যারের সঙ্গে পরামর্শ করে অবৈধ ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ক্ষেমালিকা চাকমা বলেন, ‘উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
কেএইচ/এমএ