সরিষা ফুলের সমারোহে নয়নাভিরাম এখন চলনবিল। নাটোরের গুরুদাসপুরসহ চলনবিলাঞ্চলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারোহ। দুচোখ যেদিকে যায় শুধু হলুদ আর সবুজের সমারোহ। এ যেন গাড়ো সবুজের বুকে হলুদের ছিটা। সেই সোনার ফসল নিয়ে আশায় বুক বেধেঁ বসে আছে চলনবিলের কৃষক। সেই সাথে বেড়ে গেছে মৌ চাষীদের ব্যস্ততা। দুর-দুরান্ত থেকে ভ্রুমন পিঁপাসুরাও ছুটে আসছেন চলনবিলে।
চলনবিলের বিভিন্ন মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলনবিলের মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। প্রকৃতির এ মনোরম দৃশ্য দেখে যে কোন মানুষই মুগ্ধ না হয়ে পারে না। হলুদ ফুলের সুসজ্জিত মাঠে মৌমাছিরা পাখা মেলে উড়ছে। ভ্রমরের গুঞ্জনে কৃষকের মন আন্দলিত। কারন ফলনও বেশী হয় পরাগায়ণের ফলে। অপরদিকে সরিষার এই ফুল থেকে প্রতি বছর মধু সংগ্রহ করে লাভবান হচ্ছেন ভ্রাম্যমাণ মৌচাষীরা।
জানা যায়, চলনবিলে এ বছর প্রায় ১লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চলনবিলের মূল অংশে মোট ৪৬ হাজার ৩০৩ হেক্টর জমিতে সরিষা বপন করা হয়েছে। ফলন ভালো হলে এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। চলনবিল অধ্যুসিত নাটোরের গুরুদাসপুরে সাত হাজার ৯০৮ হেক্টর, সিংড়ায় আট হাজার ৩৫০ হেক্টর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় ১১ হাজার ৮০৫ হেক্টর, পাবনার চাটমোহরে ৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর, ভাঙ্গুড়া ৫ হাজার ৫৬০ হেক্টর এবং নওগাঁর আত্রাইয়ে ৬হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
চলনবিলের বিলসা গ্রামের কৃষক গোলাম সরদার বলেন, এ বছর তিনি ৬৫ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। সার বীজ কীটনাশক সেচ সহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১১হাজার টাকা। কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ না হলে সেই সাথে ন্যয্য মূল্য পেলে খরচ বাদে বিঘাপ্রতি লাভ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ৫ থেকে ৬ মন বিঘাপ্রতি সরিষা উৎপন্ন হয়। বিক্রি হয় ২৮শ থেকে ৩ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলনবিল জুড়ে সরিষার আবাদি জমিতে এবার ৫শতাধিক মৌ চাষী প্রায় দেড় হাজার মৌ-বক্স স্থাপন করেছে। এ বছর মধু উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দেড় হাজার মেট্রিক টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা হবে বলে আশা করছেন।
চলনবিলের সরিষা ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা বেশ কিছু ভ্রুমন প্রেমিরা জানান, চলনবিলের একেক মৌসুমে একেক রুপ ধারণ করে। বর্ষা মৌসুমে পানিতে টইটুম্বর বিশাল জলরাশি, শুকনো মৌসুমে সরিষা ফুলের হলুদে মেতে থাকা ফালগুন চেত্রৈ মাসে চলনবিল জুড়ে ইরি বোরো ধানের চমৎকার দৃশ্য নজর কারে ভ্রমন পিপাসুদের।
গুরুদাসপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা আক্তার বলেন, চলনবিল বছর জুরেই তার চিরোচেনা নানা রুপ আর সৌন্দর্য্য দিয়ে বিভিন্ন সময় নানাভাবে বিভিন্ন রুপে পর্যটকদের কাছে টানে। চলনবিলের এই নয়নাভিরাম দৃশ্য না দেখলে চলনবিলের অপার সৌন্দর্য্যটাই যেন অধরা থেকে যায়।
এমএএম/এসআর