খুলনার পুরাতন কারাগার থেকে নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়েছেন ১০০ বন্দী। শনিবার বেলা ১১টায় তিনটি প্রিজন ভ্যানে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদীকে (পুরুষ) খুলনার আধুনিক কারাগারে নেয়া হয়।
নতুন কারাগারে কয়েদীদের রজনীগন্ধা ও গোলাপের ফুল দিয়ে বরণ করেন কারা উপ-মহাপরিদর্শক মনির আহমেদ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান, জেলার মুনীর হোসাইনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সূত্র জানায়, প্রথম ধাপে বন্দীদের নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হওয়ার কথা ছিল গত শনিবার (২৫ অক্টোবর)। তবে খুলনার নতুন জেলা কারাগার নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় কার্যক্রম এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। মাটি ভরাটের কিছু কাজ হলেও পুরো নির্মাণ কাজ এখনও শেষ হয়নি।
খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জানান, “আজ শনিবার নতুন কারাগারে ১০০ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দীর স্থানান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বন্দী এখানে আনা হবে। এছাড়া যশোর জেল থেকেও কিছু সাজাপ্রাপ্ত বন্দী নতুন কারাগারে স্থানান্তর করা হবে। এতে খুলনা ও যশোরের কারাগার কিছুটা চাপমুক্ত হবে।”
তিনি আরও জানান, খুলনার এই আধুনিক কারাগারে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এটি মূলত সংশোধনাগার হিসেবে গণ্য হবে। এখানে কয়েদীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মজীবী করে গড়ে তোলা হবে, যাতে সাজা শেষে তারা সমাজে উপযোগী হতে পারে। এছাড়া তাদেরকে মানসিকভাবে মোটিভেশন দেওয়া হবে, যাতে তারা অপরাধ জগৎ থেকে ফিরে আসে।
কারা সূত্র জানায়, নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরাতন কারাগারের কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। এছাড়া বর্তমান কারাগার ঘাট এলাকায় থাকা কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে পরিচালিত হবে।
সূত্রটি আরও জানায়, খুলনায় দুটি কারাগার পরিচালনার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুব শীঘ্রই এটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে দুটি কারাগার আলাদা নামে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
কারা সূত্র জানায়, কার্যক্রম শুরু হলে দুটি কারাগারের জন্য আলাদা জেল সুপার ও জেলার দায়িত্ব থাকবে। তবে বর্তমানে পদস্থ কর্মকর্তারাই দুই কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, খুলনায় দুটি কারাগারে বন্দী রাখা হবে। ভবিষ্যতে পুরাতন কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে পরিচালিত হবে এবং এখানে খুলনা সিটি করপোরেশন বা মেট্রোপলিটন থানার এলাকায় থাকা বন্দীদের রাখা হবে। নতুন কারাগারে জেলা পর্যায়ের বন্দীরা রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নগরীর ভৈরব নদীর তীরে ১১৩ বছরের পুরোনো খুলনা কারাগারে বর্তমানে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে। সেখানে জরাজীর্ণ ভবনে ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে বন্দীদের। তাই খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কের জয়বাংলা মোড়ের অদূরে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪,০০০ বন্দী রাখতে সক্ষম হবে। তবে আপাতত ২,০০০ বন্দীর জন্য অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। পরে প্রয়োজন হলে আলাদা প্রকল্পে আরও অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে।
নতুন কারাগার নির্মাণের প্রকল্প ২০১১ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদিত হয়। ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। স্থান নির্ধারণ, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। ২০১৭ সালে প্রকল্প সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকা এবং কাজ শেষের লক্ষ্য ছিল ২০১৯ সালের ৩০ জুন। তবে তা সম্ভব হয়নি। ২০২৩ সালে প্রকল্প পুনরায় সংশোধন করলে ব্যয় বেড়ে হয় ২৮৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের সময় মোট আটবার বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রকল্প অফিস জানায়, নতুন কারাগারটি সংশোধনাগার হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দীদের পৃথক স্থানে রাখা হবে। কিশোর ও কিশোরী বন্দীদের জন্য পৃথক ব্যারাক, নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড থাকবে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল, কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, বিশাল গ্রন্থাগার, খাবার কক্ষ, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রির ব্যবস্থা থাকবে। শিশু ও নারী বন্দীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার থাকবে। এখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতিচর্চার ব্যবস্থা থাকবে। পুরুষ ও নারী বন্দীদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদনকেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে।
কারা সূত্র জানায়, প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে পৃথক সীমানাপ্রাচীর রয়েছে। এক শ্রেণির বন্দীর অন্য শ্রেণির সঙ্গে মিশার সুযোগ নেই। প্রাচীরের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার। এছাড়া ড্রেন, ফুটপাত, পয়োবর্জ্য শোধনকেন্দ্র, ওয়াকওয়ে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা, দুটি পুকুর ও সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মাটি ভরাটের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি এবং কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে।
এসএস/আরএন