যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফেডারেল আপিল আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা বেশিরভাগ শুল্ক অবৈধ। এই রায়ের ফলে তার বহুল আলোচিত পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। — খবর বিবিসির।
৭-৪ ভোটে দেওয়া রায়ে আদালত জানিয়েছে, ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন (আইইইপিএ) ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করেছিলেন। কিন্তু এই আইন প্রেসিডেন্টকে সে ধরনের ক্ষমতা দেয় না। শুল্ক আরোপ কংগ্রেসের সাংবিধানিক এখতিয়ার বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়।
নতুন এই রায় কার্যকর হবে আগামী ১৪ অক্টোবর থেকে। তবে তার আগে প্রশাসন চাইলে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মামলাটি এখন প্রায় নিশ্চিতভাবেই সর্বোচ্চ আদালতে গড়াবে।
বর্তমানে চীন, মেক্সিকো এবং কানাডাসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের ওপরই অন্যায্য শুল্ক আরোপ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
তবে ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে ট্রাম্প এই রায়ের সমালোচনা করে বলেন, যদি এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকে, তবে তা আক্ষরিক অর্থেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দেবে।
তিনি আরও লিখেছেন, আজ একটি আপিল আদালত বলেছে আমাদের শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত, কিন্তু তারা জানে যে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই জিতবে। এই রায় সঠিক নয়।
ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, শুল্ক তুলে নেওয়া হলে তা দেশের জন্য একটি সম্পূর্ণ বিপর্যয় হবে। এতে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়বে, অথচ দেশের শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন।
ট্রাম্প বাণিজ্যের ওপর জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে, বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। তবে আদালত রায়ে জানিয়েছে, শুল্ক আরোপ করা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার আওতায় পড়ে না এবং এটি কংগ্রেসের মূল এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত।
ফেডারেল সার্কিট আপিল আদালত ট্রাম্পের সেই যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে তিনি দাবি করেছিলেন আইইইপিএ-র আওতায় শুল্ক আরোপ বৈধ। আদালত স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, এই শুল্কগুলো “অবৈধ ও আইনের পরিপন্থী”।
১২৭ পৃষ্ঠার বিস্তারিত রায়ে বলা হয়, আইইইপিএ-তে কোথাও শুল্ক বা এর কোনও প্রতিশব্দ উল্লেখ নেই। একই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতায় সীমা নির্ধারণের মতো কোনো প্রক্রিয়াগত সুরক্ষাও এতে নেই।
ফলে আদালতের মতে, কর ও শুল্ক আরোপের ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতেই বহাল থাকবে। রায়ে আরও বলা হয়, ১৯৭৭ সালে কংগ্রেস যখন এই আইনটি পাশ করেছিল, তখন সেটি করার উদ্দেশ্য ছিল না প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপে সীমাহীন ক্ষমতা দেওয়া।
আদালত রায়ে লিখেছে, যখনই কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা দিতে চায়, তখন তা স্পষ্টভাবে “ট্যারিফ” বা “ডিউটি”-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঙ্গরাজ্য জোটের দায়ের করা দুটি মামলার প্রেক্ষিতে আদালত এই রায় দেয়। মামলাগুলো হয়েছিল গত এপ্রিলে দেওয়া নির্বাহী আদেশকে কেন্দ্র করে। সেই আদেশে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক এবং আরও ডজনখানেক দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছিলেন। তিনি ওই দিনটিকে ঘোষণা করেছিলেন “আমেরিকার অন্যায্য বাণিজ্যনীতির হাত থেকে মুক্তির দিন” হিসেবে।
এরপর মে মাসে নিউইয়র্কভিত্তিক কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড রায় দিয়েছিল যে এসব শুল্ক অবৈধ। তবে আপিল প্রক্রিয়া চলায় সেই রায় স্থগিত রাখা হয়। শুক্রবারের রায়ে শুধু বৈশ্বিক শুল্কই নয়, চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর আরোপিত শুল্কও বাতিল করা হয়েছে। এর আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এই শুল্কগুলো মাদক আমদানি ঠেকাতে খুবই জরুরি।
তবে এই সিদ্ধান্ত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, কারণ সেগুলো ভিন্ন আইনি ক্ষমতা বলে আরোপ করা হয়েছিল।
রায় ঘোষণার আগে হোয়াইট হাউজের আইনজীবীরা যুক্তি দিয়েছিলেন, এই শুল্কগুলো অবৈধ ঘোষণা করা হলে তা ১৯২৯ সালের মহামন্দার মতো আর্থিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
তারা এক চিঠিতে লিখেছিলেন, আইইইপিএ-এর আওতায় প্রেসিডেন্টের শুল্ক আরোপের ক্ষমতা হঠাৎ বাতিল করা হলে, তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, বৈদেশিক নীতি ও অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
আরএন