ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈলে এক হাজারের বেশি পুকুরে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ পুকুরে মুরগির বিষ্ঠা (লিটার) সরাসরি মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, খামার থেকে মুরগির বিষ্ঠা যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া সরাসরি পুকুরে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে রাস্তার ধারে ও পুকুরের পাড়ে যত্রতত্র স্তুপ করে রেখে দেওয়া হয়। সন্ধ্যার দিকে সেগুলো গাড়িতে করে এনে পুকুরে ফেলা হয় মাছ চাষের উদ্দেশ্যে।
এতে পানির মান নষ্ট হচ্ছে, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ এবং চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, যার ফলে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নেকমরদ–কাতিহার মহাসড়ক, নেকমরদ–চেকপোস্ট সড়ক, মীরডাঙ্গী–গাজীরহাট ও চামারদিঘি সড়কসহ গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ পুকুরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন খামারের মুরগির বিষ্ঠা ও সংশ্লিষ্ট বর্জ্য পদার্থ, যা স্থানীয়ভাবে ‘লিটার’ নামে পরিচিত।
স্থানীয়রা জানান, রাস্তার পাশে এসব পোল্ট্রির বিষ্ঠা ও বর্জ্য ফেলে রাখায় পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা ও দুর্গন্ধের কারণে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। এর ফলে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
কিছু সংখ্যক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, মাছচাষীরা প্রভাবশালী হওয়ায় অনেকে মুখ খুলতে ভয় পান। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে হুমকি-ধামকিরও শিকার হতে হচ্ছে। দিনের পর দিন একই পুকুরে বারবার বিষ্ঠা ও বর্জ্য ব্যবহার করায় পানির গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে এবং তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন বিষয়টি জানলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি বিভাগ বলছে, মুরগির বিষ্ঠা প্রক্রিয়াজাত করে জৈব সার তৈরি করা যায়। প্রায় চার মাস মাটিতে পুঁতে রাখলে ১০০ কেজি বিষ্ঠা থেকে ৫০ কেজি টিএসপির গুণাগুণসম্পন্ন জৈব সার উৎপাদন সম্ভব, যা মাছ চাষে সঠিকভাবে ব্যবহারযোগ্য।
স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, মুরগির খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ও কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। মুরগির মল মাছের শরীরে প্রবেশ করলে তা সহজে ধ্বংস হয় না। ফলে এসব মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি হয়। এজন্য সরকার মাছের খাদ্য হিসেবে মুরগির বিষ্ঠার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল জলিল বলেন, “শুনেছি কিছু মৎস্যচাষী মুরগির বিষ্ঠা ও বর্জ্য ব্যবহার করছে। আমি বিভিন্ন সেমিনার, প্রশিক্ষণ ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মৎস্যচাষীদের সচেতন করার চেষ্টা করেছি। তবুও তারা থামছে না। আমি ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি—এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাফিউল মাজলুবিন রহমান-কে দুপুরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
কেএ/আরএন