প্রতিবেশীর সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী ভাড়ার দরদাম নিয়ে নিয়ে দ্বন্দ্ব। তারপর নিজের ব্যবহৃত ছেঁড়া শার্ট ও মোটরসাইকেল রাতে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে গুম নাটক সাজান যুবক। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে কক্সবাজারে গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন টানা ১৭ দিন।
জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের সাইঞ্চারপাড় গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত যুবক স্বপন মোল্লা (৩২) ওই গ্রামের জসিম মোল্লার ছেলে।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় কক্সবাজারের উখিয়া এলাকার একটি মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করে বুধবার (২৮ মে) রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্র জানান, সরিষাবাড়ী পৌরসভার মূলবাড়ি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে নির্মাণ সামগ্রী (সেন্ডারিংয়ের বাঁশ-কাঠ) ভাড়ার দরদাম নিয়ে স্বপন মোল্লার তর্কবিতর্ক হয়। এ ঘটনার জের ধরে সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলী বাবুকে ১০ মে বিকেলে স্বপন মারধর করে। এসময় ৯৯৯-এ কল দিলে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়। পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে আপোষ-মিমাংসার সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে স্থানীয় মাতব্বরদের সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাউকে কিছু না বলে 'ঘটনা অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে স্বপন বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ১০ মে রাত ১২টার দিকে বলারদিয়ার মাধুর মোড়ের নিকট রাস্তা থেকে তার ব্যবহৃত ছেঁড়া শার্ট ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রাখে।
সিরাজুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলী বাবু অভিযোগ করেন, "আমাদেরকে ফাঁসাতে স্বপন পরিকল্পিতভাবে পালিয়ে গিয়ে গুম নাটক সাজায়। বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে সে 'প্রাণনাশের হুমকি'র কথা উল্লেখ করে তার স্ত্রীর কাছে কম্পিউটারে কম্পোজকৃত একটি চিঠি রেখে যায়। ওই রাতেই চিঠির সূত্র ধরে পুলিশ আমার ভাই মোহাইমিনুল ইসলাম সাবুকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রমাণিত না হওয়ায় পরদিন দুপুরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়।"
এদিকে ২২ মে স্বপন তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে বাড়িতে কল দিয়ে জানায়, "বিপদের মধ্যে আছি, দ্রুত ২ লাখ টাকা পাঠাও"। পরিবারের লোকজন বিষয়টি থানায় অবগত করলে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথমে কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকায় তার অবস্থান সনাক্ত করে পুলিশ। পরে উখিয়া থানার সহায়তায় সরিষাবাড়ী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে উখিয়া এলাকার একটি মসজিদ থেকে তাকে উদ্ধার করে।
এব্যাপারে সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদুল হাসান জানান, "প্রতিবেশীর সঙ্গে ঝগড়ার ঘটনা অন্যদিকে মোড় দিতে স্বপন গুম নাটক সাজায়। জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজের আত্মগোপনে থাকার কথা স্বীকার করেছে। ১৬ দিন পর তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সুইচ অন করায় তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অবস্থান সনাক্ত ও তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।"
তবে হয়রানির শিকার পরিবারের অভিযোগ না থাকায় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে স্বপন মোল্লাকে তার বাবা জসিম মোল্লার জিম্মায় হস্তান্তর করা হয় বলে ওসি জানান।
জেডজেড/এসআর