এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জনের পরও কলেজে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে মাদারীপুরের শিবচরের এক মেধাবী শিক্ষার্থী ইমরান। অদম্য মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমে ভালো ফলাফল করলেও, অর্থনৈতিক সংকটে থমকে গেছে তার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন।
ইমরান মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার মাদবরেরচর ইউনিয়নের ডাইয়ারচর গ্রামের অটোচালক আবু কালাম মিনা ও গৃহিণী হামিদা বেগম দম্পতির সন্তান। তিন ভাইবোনের মধ্যে ইমরান দ্বিতীয়। সে মাদবরেরচর রহিম উদ্দিন মাদবর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় মনোযোগী ইমরান নিয়মিত ক্লাসে উপস্থিত থাকত, শিক্ষকদের নির্দেশনা মেনে চলত এবং বরাবরই ছিল শ্রেণির প্রথম সারিতে। তার স্বপ্ন একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
কিন্তু ইমরানের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস তার বাবার অটো চালানোর আয়। সেই আয় দিয়ে চলতে হয় পুরো পরিবারের খরচ—ইমরানের বড় ভাই স্নাতকে, ছোট বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ফলে কলেজে ভর্তি ও পরবর্তী শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা পরিবারের পক্ষে এখন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ইমরানের বাবা আবু কালাম বলেন, “আমার ছেলে এই এলাকার মধ্যে প্রথম গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। আমি গর্বিত। কিন্তু আমি একজন অটোচালক। এই সামান্য আয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খাই, ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো আমার পক্ষে সম্ভব না। স্কুলের স্যাররা অনেক সাহায্য করেছেন, বেতন নেয়নি, তাই এসএসসি পর্যন্ত পড়াতে পেরেছি। কিন্তু এখন ঢাকায় ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া এবং থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানো খুব কষ্টসাধ্য। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, আমার ছেলেকে যেন সহযোগিতা করা হয়।”
ইমরানের মা হামিদা বেগম চোখের জলে বলেন, “অনেক কষ্ট করে ছেলেকে এত দূর এনেছি। স্কুলের স্যাররাই পাশে না থাকলে হয়তো এতদূর সম্ভব হতো না। এখন কলেজে ভর্তি ও লেখাপড়ার খরচ আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সরকারের সহায়তা ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারব না।”
ইমরান নিজের অনুভূতি জানিয়ে বলেন, “আমার এই ফলাফলের পেছনে বাবা-মা আর শিক্ষকদের অবদান সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এখন যেভাবে আর্থিক সংকট, তাতে আমার স্বপ্ন হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে। আমি একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশের জন্য কিছু করতে চাই। কেউ পাশে দাঁড়ালে হয়তো আমার স্বপ্নটা বাস্তব হতে পারে।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোতালেব শিকদার বলেন, “২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় আমাদের স্কুল থেকে ইমরান গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রতিটি বিষয়ে সে ৮৫ থেকে ৯৭ নম্বর পর্যন্ত পেয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কখনো দ্বিতীয় হয়নি। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। এমন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে উচ্চশিক্ষায় পাঠানো আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।”
ইমরানকে সহায়তা করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে- শিক্ষক: ০১৭১৫৫৯০২৯৬, পরিবার: ০১৭৫৫২০৪৩২৪
দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ইমরানের মতো অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি। সমাজের হৃদয়বান ও সহানুভূতিশীল মানুষদের সহায়তাই হয়তো বদলে দিতে পারে ইমরানের ভবিষ্যৎ।
এসএসআর/এসআর