শীতকালীন সবজিতে ভরপুর রাজশাহীর চর |
![]() রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার চর রয়েছে। এর মধ্যে চারঘাটের চরের পরিমাণ কম। চার উপজেলায় চরে জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৪ হেক্টর। এর মধ্যে আবাদী জমির পরিমাণ ৭ হাজার ৯৪৮ হেক্টর। বর্তমানে ৬৬৫ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। পবা উপজেলার চর মাজারদিয়ায় সরেজমিনে দেখা যায়, টমেটো, মূলা,বাধাকপি, বেগুন, শিম, লাউ, করলা, পেঁপেসহ নানা তরতাজা সবজিতে ভরে আছে মাঠ। এই চরে পেয়ারা এবং ড্রাগন ফলেরও বাগান হয়েছে। পেঁয়াজ, রসুন, মাসকলাইসহ আরও নানা ফসল চাষ করেছেন চাষিরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, বেলে দোআঁশ মাটিতে সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না। পোকামাকড়েরও আক্রমণ কম। তাই খুব একটা কীটনাশক দেয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। শুধু পানি পেলেই চরে সব ফসলের আবাদ ভাল হয়। কিন্তু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে তারা সবজির দাম পান কম। চর মাজারদিয়া গ্রামের চাষি ফারুক হোসেন বলেন, নদী বড় থাকলে নৌকায় তাদের যোগাযোগ সহজ হয়। কিন্তু তখন পানি ঢুকে তাদের চাষের জমি কমে যায়। আবার পানি নেমে গেলে যে পলি পড়ে তাতে সবজির চাষ হয় ভাল। কিন্তু তখন নৌপথ কমে গিয়ে বেড়ে যায় পায়ে হাঁটার পথ। ওই দুর্গম চর থেকে তাদের সবজি ওপারের বাজারে নিতে নিতেই তাজা সবজি আর তাজা থাকে না। তখন পাইকারী ক্রেতারা দাম কম দেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী চরে সবজি কিনতে আসেন। কিন্তু বিশাল চর আর নদী পাড়ি দিয়ে সবজি নিয়ে যেতে হবে বলে তাদের কম দাম দেয়া হয়। এতে তাদের ক্ষতি না হলেও লাভের পরিমাণ কমে যায়। একই এলাকার টমেটো চাষি সোহরাব আলী বলেন, নদীর ওপারে যদি টমেটোর কেজি ২০ টাকা হয়, তাহলে এপারে ১০ টাকা। একটা নদীর এপার-ওপারে দামের এমন পার্থক্য। সোহরাব বলেন, গ্রীষ্ণকালে পানি কমে নদী ছোট হয়ে আসে। তখন সবজি গরু-মহিষের গাড়ি অথবা ট্রলিতে করে নিয়ে চর পাড়ি দিতে হয়। কিন্তু চরের মাঝে যদি আবার ছোট নদী থাকে তাহলে ভোগান্তি আরও বেড়ে যায়। এসব ভোগান্তির কারণেই তারা ভাল সবজি উৎপাদন করলেও ভাল দাম পান না। পবার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবী আল হাসান মুঞ্জিল বলেন, চরের সবজি খুব সুস্বাদু। নদীর ওপারের সবজি আর এপারের সবজির স্বাদের মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাৎ। চরাঞ্চলের সবজির স্বাদ ভাল হওয়ার কারণ এখন সার-কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। শুধু পানি পেলেই চরে খুব ভাল সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু এত ভাল সবজি উৎপাদন করেও চাষিরা ভাল মূল্য পান না। তিনি বলেন, নদীপাড় থেকে চরের গ্রাম পর্যন্ত যদি পাকা রাস্তা নির্মাণ করা যায় তাহলে চাষিদের কষ্ট অনেক কমে যাবে। চাষিরা অন্তত সহজে নদীপাড় পর্যন্ত তাদের ফসল নির্বিঘ্নে নিয়ে যেতে পারবেন। চর মাজারদিয়া এলাকায় আমরা এ রকম একটা রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সামশুল হক বলেন বলেন, চরের মাটিতে যে কোন ফসলের আবাদ অত্যন্ত ভাল হয়ে থাকে। প্রতিবছর বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ার পর নতুন করে পলি জমার কারণে চাষাবাদ ভাল হয়। কিন্তু নৌকা ছাড়া ফসল আনার উপায় না থাকার কারণে চাষিরা দাম কিছুটা কম পান। তবে এ বছর দাম কিছুটা ভাল পাওয়া যাচ্ছে। আরএইচএফ/এসআর |